হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম - হিন্দু ধর্মে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম

হিন্দুধর্ম অনুসারে যৌনতা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রকৃতপক্ষে এটি জীবনের চারটি পুরুষার্থের অংশ। ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ হল একজন হিন্দুর জীবনের চারটি পুরুষার্থ। এখানে কাম বলতে এমন সমস্ত কাজ বোঝায়, যা আমাদের আনন্দ দেয়। সহবাস সেই কাজগুলোর মধ্যে একটি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম বা হিন্দু ধর্মে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম

• হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম
• হিন্দু ধর্মে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম
• আয়ুর্বেদ অনুসারে সহবাসের নিয়ম
• পুরুষের শরীরে বীর্যের গুরুত্ব
• স্ত্রী সহবাস করা একটি কর্তব্য
• হিন্দু আইনের অধীনে সহবাস
• শেষ কথা

হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম

কামসূত্র হল একটি হিন্দু ঋষি বাতস্যায়নের লেখা যৌনতা সম্পর্কিত একটি প্রাচীনতম বই। এই বইটি থেকে সহবাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় যেমন ধরন, অবস্থান, গুরুত্ব ও হিন্দু ধর্মে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম। এটা চিরন্তন সত্য স্বামী স্ত্রী মিলিত হয়। এখানে হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম নিচে দেখুনঃ

হিন্দুধর্ম অনুসারে সহবার শুধুমাত্র বিবাহিত হলেই পবিত্র। হিন্দুধর্ম মতে বিয়ের আগে সহবাস করা নিষিদ্ধ করে। তাই হিন্দুদের জন্য বিয়ের আগে লিভ-ইন সম্পর্ক অনুমোদিত নয়। আদর্শভাবে স্ত্রী সহবাস প্রজননের জন্য করা হয়। তবে হিন্দুধর্মে সমকামী সহবাস কিছুটা অনুমোদিত। যদি একজন ব্যক্তি একজন একজন পুরুষ সঙ্গীর সাথে বিয়ে করে তাহলে তারা একে অপরের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। কিন্তু দুই নারীর মধ্যে সহবাস নিষিদ্ধ।

আরো পড়ুনঃ এসএসসি পাশে পার্ট টাইম জব

হস্তমৈথুনও হিন্দু ধর্ম অনুসারে পাপ। পর্ণ সাইট দেখা বা এমনকি আপনার সঙ্গী ছাড়া অন্য ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্কে চিন্তা করা একটি পাপ। যারা ব্রহ্মচর্য পালন করেন তারা হিন্দু সমাজে সম্মানিত। হিন্দুধর্মের কিছু সম্প্রদায় মহিলা যৌনাঙ্গ দেবী হিসাবে পূজা করে।

যদিও হিন্দু ধর্ম বহুবিবাহকে সমর্থন করে না প্রাচীনকালে হিন্দু সমাজে এটি একটি প্রচলিত প্রথা ছিল। মহাভারত ব্যতীত বহু বিবাহের অনুমতি ছিল না, দ্রৌপদীকে পাণ্ডবদের পাঁচ স্বামী হিসাবে দেখানো হয়েছে। হিন্দু ধর্ম পতিতাবৃত্তিকে সমর্থন করে না বিবাহ ছাড়া কারো সাথে সম্পর্ক একটি খারাপ কাজ। তাহলে এখান থেকে হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম বা হিন্দু ধর্মে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম জানতে পারি।

হিন্দু ধর্মে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম

হিন্দু বিবাহ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান । হিন্দু ধর্ম অনুসারে একজন স্বামীকে শুধুমাত্র তার স্ত্রীর মাসিক চক্রের ১৬ দিনের মধ্যে সহবাস করা উচিত। যাইহোক এই 16 দিনের মধ্যে ৬ দিন সহবাস করা নিষিদ্ধ। স্ত্রীর মাসিক চক্রের প্রথম ৪ দিন এবং মাসের ১১ এবং ১৩ তারিখে সহবাস নিষিদ্ধ।

আয়ুর্বেদ অনুসারে সহবাসের নিয়ম

আয়ুর্বেদ বিশ্বাস করে যে একজন দম্পতির যখন মহিলা সঙ্গীর মাসিক হয় তখন সেক্স করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে পিরিয়ডের সময় সহবাস এন্ডোমেট্রিওসিস নামে একটি সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ রকেট থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

• আয়ুর্বেদ অনুসারে একটি আদর্শ যৌন অবস্থান হল এমন একটি যেখানে মহিলা তার মুখের দিকে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে শুয়ে থাকে।
• আয়ুর্বেদও বিশ্বাস করে যে খুব বেশি ওজন ব্যক্তিদের যৌন সম্পর্ক এড়ানো উচিত।
• আপনার গোপনাঙ্গ পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর হলেই সহবাস করুন যেন কোনো রোগ না হয়।
• আয়ুর্বেদঅনুসারে গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পরপরই সহবাস করা নিষিদ্ধ। একজনের তাদের ইচ্ছার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। এতে আরও বলা হয়েছে যে সিজারের ক্ষেত্রে ৫ মাস সময় এবং স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে ২-৩ মাস সহবাস করা উচিত নয়।
• আয়ুর্বেদ অনুসারে কিছু দিনগুলিতে যেমন উত্সব, বিভিন্ন গ্রহন, পূর্ণিমা বা অমাবস্যার রাতে সহবাস করার অভ্যাসকে সমর্থন করে না।
• খালি পেটে বা বেশি খাবারের পরে সহবাস করলে বাত এবং পিত্তের সমস্যা সৃষ্টি করে। এটা হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা, গ্যাস্ট্রাইটিসের জন্ম দিতে পারে।
• আয়ুর্বেদ বয়স্ক মহিলাদের সাথে বা শিশুদের সাথে যৌন সম্পর্ক করার বিরুদ্ধে।
• আয়ুর্বেদ অনুসারে আপনি অসুস্থ বা শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট না হলে কখনই সহবাস করবেন না।
• আয়ুর্বেদ অনুসারে প্রাণীদের সাথে সহবাস করা অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়।
• বর্ষা ও গ্রীষ্মের সময় শরীরের শক্তি সবচেয়ে কম থাকে, তাই সে সময় কম সহবাস করুন পনের দিনে একবার করতে পারেন।
• বসন্ত এবং গ্রীষ্মে তিন দিনে একবার সহবাস করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
• শীতকালে শরীরের শক্তি শীর্ষে থাকে তাই প্রতিদিন সহবাস করতে পারেন।

পুরুষের শরীরে বীর্যের গুরুত্ব

বীর্য হল পুরুষের দেহে শক্তির সর্বোচ্চ উৎস। মহাবিশ্বের ধারাবাহিকতায় শুক্রাণুর একটি প্রধান ভূমিকা রয়েছে। আপনারা যে খাদ্য খান তা থেকে বীর্য সৃষ্টি হয় এবং খাদ্য শুক্রাণুতে রূপান্তরিত হতে কিছু দিন লাগে। তাই বীর্যের ক্ষতি বা অপচয়কে শক্তির ক্ষয় হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিকে যৌন ভাবে দূর্বল করে দেয়।

স্ত্রী সহবাস করা একটি কর্তব্য

মানব জাতির জন্য প্রাথমিকভাবে যৌনতা হল ধর্ম বা কর্তব্য এবং সহবাসের মাধ্যমে  আনন্দ পাওয়া যায়। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী সহবাস করে তারা তাদের সন্তান আকারে নতুন জীবন জন্ম দেয়। পরিবার এবং সমাজের প্রতি তাদের প্রাথমিক কর্তব্য পালন করে। তিনি তার সন্তানদের মধ্যে যে গুণাবলী, পরিচয় এবং জ্ঞান প্রদান করেন তার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে বেঁচে থাকেন। উপরে আমরা হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম আলোচনা করেছি।

হিন্দু আইনের অধীনে সহবাস

বিবাহ হল প্রাচীনতম সামাজিক অনুষ্ঠান গুলির মধ্যে একটি যা অনাদিকাল থেকে হয়ে আসছে। এটি হিন্দু আইনের অধীনে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫ এর ধারা ৫ অনুসারে দুটি হিন্দুর মধ্যে বৈধ বিবাহ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবেঃ

আরো পড়ুনঃ কাঁপুনি দিয়ে তুমুল জ্বর ম্যালেরিয়া নয়তো

• বিয়ের সময় কোন পক্ষেরই আগে বিবাহিত থাকা যাবে না। মানে হিন্দু আইন মতে একটার বেশি বিয়ে করা অন্যায় হিসেবে ধরা হয়।
• বিয়ের সময় কোন পক্ষই মানসিক অস্থিরতার কারণে বিয়ে সম্মতি দিতে অক্ষম হলে বা সম্মতি দিতে সক্ষম হলেও এমন মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন যার কারণে বিবাহ এবং সন্তান জন্মদানের জন্য অনুপযুক্ত।
• বিয়ের সময় বরের বয়স একুশ বছর এবং কনের বয়স আঠার বছর পূর্ণ হতে হবে।
• বিয়ের আগে তাদের একসাথে থাকা যাবে না যতক্ষণ তাদের পরিবার থেকে অনুমতি দেওয়া না হয়।

হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম - শেষ কথা

এটা প্রাকৃতিক নিয়ম হল যে একজন স্বামী স্ত্রী সহবাস করবে। সব ধর্মেই সহবাস করার কিছু নিয়ম রয়েছে। সেরকম হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনেই স্বামী স্ত্রী সহবাস করতে পারে না হলে তাদের ধর্ম অনুসারে পাপ হয়। হিন্দু ধর্মেও বিবাহিত ছাড়া সহবাস করা নিষিদ্ধ। হিন্দু ধর্মে স্ত্রীর মাসিক চক্র এর মধ্যে ১৬ দিন সহবাস করতে পারবে। তবে এই ১৬ দিনের মধ্যেও ৬ দিন সহবাস নিষেধ। আশা করি উপরের আলোচনা থেকে হিন্দু ধর্মে সহবাসের নিয়ম বা  হিন্দু ধর্মে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম ভালোভাবে জানতে পারবেন। ২২৪৯৮