কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ
বর্তমানে কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা এটি জেনে রাখা প্রয়োজন। কারণ, আমরা অনেক সময় কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করি কিন্তু এই বিষয়টি জানিনা যে কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা। তাই আপনাদের উদ্দেশ্যে এই পোস্টে কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা এ বিষয়টি ইসলামী শরিয়তে নির্দেশিত নীতিমালার আলোকে বিস্তারিত তুলে ধরব।
অনেকের কাছে নগদ টাকা তৎক্ষনাৎ না থাকায় কিস্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোন ক্রয় করে থাকেন। যদিও একেক প্রতিষ্ঠান একেক ভাবে কিস্তিতে মোবাইল বিক্রয় করে থাকে। তাই সেখান থেকে কিস্তিতে মোবাইল কেনা শরীয়ত সম্মত হয় কিনা তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। আজ এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনারা কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা এ বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের আলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে ধারনা লাভ করতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র - কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা জেনে নিন
কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় কী?
কোনো কিছু কিস্তিতে লেনদেন করা বলতে বোঝায় বিক্রেতা তার বিক্রিত পণ্য একটি চুক্তির মাধ্যমে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেবেন কিন্তু ক্রেতা তৎক্ষণাৎ পণ্যটির মূল্য পরিশোধ করবে না। ক্রেতা চুক্তিপত্রে উল্লেখিত চুক্তি মোতাবেক পর্যায়ক্রমে মাসে মাসে পণ্যটির মূল্য পরিশোধ করবে। এভাবে আপনি কিস্তিতে মোবাইলও ক্রয় করতে পারবেন। এভাবে লেনদেন করার পদ্ধতিকে ইসলামিক পরিভাষায় কিস্তি বা 'বাইয়ে বিন তাকসিত' বলে। কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ? এটি এবার জেনে নিন।
কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ?
বর্তমানে হর হামেশাই কিস্তিতে মোবাইল ফোন ক্রয় বিক্রয় চলছে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ? কোন ক্ষেত্রে কিস্তিতে মোবাইল কেনা জায়েজ এবং কোন ক্ষেত্রে জায়েজ হবে না চলুন ইসলামী নীতিমালার আলোকে এবার জেনে নিই।
আরও পড়ুন: এসএসসি পাশে পার্ট টাইম জব
- ক্রেতা যদি নির্দিষ্ট কিস্তিতে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে দেয় এবং বিক্রেতা যদি তার থেকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ আদায় না করে, তবে সেই কিস্তি বৈধ হবে। অর্থাৎ কিস্তি যদি সুদবিহীন হয় তবেই কেবল কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা জায়েজ হবে।
- কিন্তু প্রতি মাসে কিস্তিতে % হিসাবে অতিরিক্ত টাকা যদি দিতে হয়, তবে সেটি সুদ হিসেবে গণ্য হবে। আর সময়ের বিনিময়ে সুদ ইসলামের সম্পূর্ণ হারাম। কারণ শরিয়তে এই সময়ের কোন বিনিময়যোগ্যতা নেই।
- আবার বিক্রেতা যদি কিস্তি হিসেবে বিক্রয় মূল্যের চেয়ে অল্প টাকা পরিশোধ করে, তবে সেই লেনদেনও বৈধ হবে না। কিন্তু বিক্রেতা যদি স্বেচ্ছায় কম টাকা নিয়ে থাকে তবে সেটি আলাদা হিসাব।
- কিস্তির মেয়াদ অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরে বিক্রেতা যদি অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তবে সেই লেনদেনও বৈধ হবে না। সেটিও একপ্রকার সুদের আওতায় পড়বে। আশা করি কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা সেটি বুঝে ফেলেছেন।
কিস্তিতে বেচাকেনা সম্পর্কিত হাদিস
পবিত্র হাদিস শরীফে কিস্তিতে বেচাকেনা সম্পর্কিত বেশ কিছু হাদিস রয়েছে। আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, "রাসূল (সাঃ) এক ইয়াহুদীর কাছ থেকে বাঁকিতে কিছু খাবার খরিদ করেন এবং তার বিনিময়ে ইয়াহুদীর কাছে একটি লৌহবর্ম বন্ধক রেখেছিলেন (বুখারী- হাদিস নং ২৯৩)। এছাড়া মহান আল্লাহ বাকিতে লেনদেন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেন, "হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বাকিতে লেনদেন কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও" (সূরা বাকারা: ২৮২)।
অতএব বুঝতেই পারছেন ইসলামে বাকিতে লেনদেন করার বিধান রয়েছে। আরো একটি হাদিসে আয়েশা (রাঃ) বলেন, "বারিরা (রা.) এসে বলল, আমি ৯ ওয়াকিয়ার বিনিময়ে নিজেকে গোলামি থেকে মুক্তি করার চুক্তি করেছি। প্রতিবছর এক উকিয়া করে দিতে হবে এবং আমাকে সাহায্য করুন (বুখারী ৩/১৫২)। সুতরাং, শরীয়ত সম্মত উপায়ে কোনো প্রকার সুদ আদান-প্রদান না করে কিস্তিতে লেনদেন করাও জায়েজ রয়েছে। অর্থাৎ, কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ? সেটি বুঝে গেলেন।
কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় সম্পর্কিত সতর্কতা
কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা আপনারা ইতোমধ্যে সে সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আমরা যেন জায়েজ ভাবেই আমাদের পছন্দের মোবাইল ক্রয় করতে পারি সে বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। চলুন সেসব সর্তকতা মূলক বিষয়গুলো এবার জেনে নিই।
আরও পড়ুন: রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কিনা জেনে নিন
- কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করার সময় যেন কোন প্রকার সুদের লেনদেন না হয় সে ব্যাপারে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। অর্থাৎ বিক্রেতা মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে কোন প্রকার মুনাফা দাবি করতে পারবে না। এছাড়া কিস্তি পরিশোধের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে অতিরিক্ত কোন অর্থ আদায় যাতে না হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- আপনি চাইলে আপনার কোন কিছু বন্ধক রেখে তার বিনিময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন। অতঃপর কিস্তি পরিশোধ হয়ে গেলে বন্ধককৃত মাল ফেরত নিবেন। এটি সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত।
- আবার নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে কিস্তি পরিশোধ করলে তার প্রতিদান স্বরূপ কিছু অর্থ কম দেওয়ার দাবিও করা যাবে না। কারণ তখন তা মেয়াদের বিনিময় বা 'আজল' হিসাবে গণ্য হবে, যা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। তবে বিক্রেতা খুশি হয়ে কম রাখলে সেটি আলাদা হিসাব। আশা করি কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা তা উপরে আলোচিত তথ্যগুলোর আলোকে বুঝে গেলেন।
কিস্তিতে মোবাইল ক্রয়ের ইতিকথা
যদি শরীয়ত সম্মত ভাবে কিস্তি প্রদান করা যায় তবে সেক্ষেত্রে মোবাইল ক্রয় করা অবশ্যই জায়েজ হবে তা আপনারা সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে জেনে নিলেন। সুতরাং কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ কিনা এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি আপনার বন্ধুদের জানাতে চাইলে এই পোস্টটি এখনি তাদের সাথে শেয়ার করুন। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনের আরো নানা বিষয় সম্পর্কিত নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ। @23891
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url