গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। আর তা হলো গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম। পূরো পোষ্টটি মনযোগের সাথে পড়লে আপনি আপনার জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়মের সুষ্পষ্ট ধারনা পেয়ে যাবেন। চলুন তবে শুরু করা যাক।
আল্লাহর বাণী ও মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস
“যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন নামায প্রতিষ্ঠা কর; নিশ্চয় নামায মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা ফরয করা হয়েছে। (সূরা নিসা: ১০৩)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মু‘আয বিন জাবাল (রা:)কে ইয়ামান প্রেরণ করেন, তখন তাকে বলেনঃ “তুমি তাদেরকে শিক্ষা দিবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রতিদিন (দিনে-রাতে) তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন।”
জাবের বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “মুসলিম বান্দা এবং কাফের ও মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল ছালাত পরিত্যাগ করা।”
আল্লাহর বাণী ও মহানবীর হাদিস মোতাবেক, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য সালাতের গুরুত্ব ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। যাইহোক আমাদের আজকের টপিক সালাতের গুরুত্ব বর্ণনা করা নয় তাই সেদিকে আর যাচ্ছি না। আজ জানবো গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে।
আরো পড়ুন: কতটুকু দূরত্বে গেলে কসরের নামাজ পড়তে হয়
গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম: ধারাবহিকতা রক্ষা করে কাজা নামাজ পড়তে হবে।
সকল ফরজ নামাজ সমূহ তার ওয়াক্তের ভিতরে আদায় করা ওয়াজিব। কোন ওযর ছাড়া নামাজকে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করা জায়েজ নেই। ওযরের কারণে কেউ নামাজে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্বিত করলে ওজর দূর হওয়ার পর তার ওপর ওই সকল নামাজ কাজা করা অপরিহার্য। ফরজ নামাজের কাজা ফরজ। ওয়াজিব নামাজের কাজা ওয়াজিব। সুন্নত ও নফলের কাজা হয় না। তবে সুন্নত ও নফল শুরু করার পর যদি তা ভঙ্গ করা হয় তাহলে তার কাজা করা ওয়াজিব হয়ে পরে। গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায় করতে এই বিষয়েটি গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করা দরকার।
ফজরের নামাজের সুন্নত কাজা করা উচিত নয়, যদি সুন্নত কাজা হয়ে যায়, তবে তার কাজা নেই। কিন্তু হাদিসে ফজরের সুন্নত নামাজের অপরিসীম গুরুত্ব বর্ণিত হওয়ায়, এটি থেকে বঞ্চিত না হয়ে সূর্য পূরোপূরি উঠে যাওয়ার পরে পড়ে নেয়া উচিত। আর যদি ফজরের ফরজ নামাজের সাথে সুন্নত ছুটে যায়, তবে সূর্য মাধ্যাকাশ থেকে ঢলে পড়ার আগেই ফরজের সাথে তার কাজা পড়তে হবে। এক কথায় ফজরের নামাজ ওয়াক্তমত আদায় করতে না পারলে সূর্য মাধ্যাকাশ থেকে ঢলে পড়ার আগে যখনই হোক না কেন কাজা হওয়া ফজরের পূরো নামাজই আদায় করা উচিত। গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম ব্যাপারে রসুল (সা.) এঁর একটি বহুল পরিচিত একটি হাদিস জেনে নেই।
আর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে, তার কাফ্ফারা হচ্ছে যখনই স্মরণ হবে তখনই সে উহা আদায় করে নিবে।”
ওয়াক্তিয়া নামাজের মাঝে এবং ফাতেয়া (ছুটে যাওয়া নামাজ) এর মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। সুতরাং ছুটে যাওয়া নামাজের কাজা করার পূর্বে নামাজ আদায় করা জায়েজ নেই।অনুরূপভাবে ছুটে যাওয়া নামাজ সমূহের পরস্পরের ধারাবাহিকতা ওয়াজিব।
আরো পড়ুন: কিস্তিতে মোবাইল ক্রয় করা কি জায়েজ
ফরজ নামাজ ছুটে গেলে তা কাজা করা ফরজ। ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব। তেমনি কোন নফল নামাজ বা সুন্নত নামাজ শুরু করে ভঙ্গ করলে তা কাজা করা ওয়াজিব। সুতরাং ছুটে যাওয়া যোহরের নামাজ, পূর্বের ছুটে যাওয়া যোহরের নামাজের আগে আদায় করা জায়েজ নেই।
আর ছুটে যাওয়া নামাজ যদি ছয় ওয়াক্তের কম হয় এবং নামাজি সেগুলো কাজা করার ইচ্ছে পোষণ করে তবে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সকল নামাজ কাজা করা অপরিহার্য। জোহরের পূর্বে ফজরের কাজা আদায় করতে হবে, আছরের আগে জোহরের কাজা আদায় করতে হবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে কাজা হয়ে যাওয়া নামাজগুলো আদায় করা করতে হবে। প্রিয় পাঠক, আর গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম ব্যাপারে নিশ্চই কিছুটা হলেও ধারনা পেয়েছে।
তিনটি কারণে কাজা নামাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার বাধ্যবাধকতা থাকে না:
১. যখন ছুটে যাওয়া নামাজ পাঁচ ওয়াক্তের বেশি হয়।
২. সময় সংকীর্ণ হওয়ার কারণে কাজা নামাজ আদায় করতে গেলে ওয়াক্তিয়া নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. কোন মুসল্লি তার উপর কোন কাজা নামাজ রয়েছে এ কথা ভুলে যায় এবং ভুলক্রমে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ে নেয়।
কাজা নামাজের ধারাবহিকতার আওতায় পরে না এমন প্রসংগ:
গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম প্রসংগে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, আর তা হলো যখন ছুটে যাওয়া নামাজ ছয় অথবা ততধিক ওয়াক্তে পৌঁছার কারণে ধারাবাহিকতা রোহিত হয়ে যায়, তখন ছুটে যাওয়া নামাজ ছয় ওয়াক্তের কমে ফিরে আসলেও ধারাবাহিকতা ফিরে আসবে না।
যেমন কারো দশ ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেছে, তারপর তা থেকে সে নয় ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেছে, এবং এক ওয়াক্ত নামাজ বাকি আছে। এমতাবস্থায় যদি সেই ছুটে যাওয়া এক ওয়াক্ত কাজা করার পূর্বে স্মরণ থাকা অবস্থায় ওয়াক্তি নামাজ পড়ে, তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে। কারণ, তার থেকে ধারাবাহিকতা রহিত হয়ে গেছে।
কাজা নামাজের কথা স্বরণে থাকার পরেও যদি কেউ ওয়াক্তিয়া ফরজ নামাজ পরে, তবে তার ফরজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু এ ভঙ্গ হওয়াটা হবে অস্থায়ী। যদি সেই ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা করার পূর্বে সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, অথচ ছুটে যাওয়া নামাজের কথা তার স্মরণ আছে, তবে আদায়কৃত পঞ্চম নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে সেই ভঙ্গ হওয়াটা দূর হয়ে যাবে এবং সেই পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু আদায়কৃত পঞ্চম নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বে যদি সে ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা করে তাহলে পূর্বের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ বাতিল হয়ে যাবে এবং সেগুলো নফল নামাজে পরিণত হবে। তখন তার ওপরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেগুলো ছুটে যাওয়া নামাজ আদায় না করে পড়েছিল, সেগুলো কাজা করা ওয়াজিব হয়ে পরবে। গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম আলোচনায় এই বিষয়েটি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ।
দীর্ঘদিন নামাজ না পড়লে তার কাজা আদায় প্রসংগ:
গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম বিষয়ক আলোচনায় এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এখন পেয়ে যাবেন। সেই প্রশ্নটি হলো দীর্ঘদিন নামাজ না পড়লে তার কাজা আদায় কিভাবে করবে?
কেউ যদি বছরের পর বছর নামাজ না পড়ে তবে সেই নামাজগুলোর কাজা করার কোন প্রয়োজন নেই। ধরুন আপনি ছোট থেকে নামাজ পড়েননি, এখন আপনার বয়স ৩০ বা ৩২ বছর, এখন আপনার চোখ খুলেছে এবং পূর্বের কাজা হয়ে যাওয়া নামাজগুলোর জন্য আপনার আফসোস হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে আপনার করণীয় একটি জিনিসই রয়েছে আর তা হলো পরম করুনাময় আল্লাহর দরবারে একনিষ্ঠ ভাবে তওবা করা। একনিষ্ঠভাবে খালেস দিলে পূর্বের ছুটে যাওয়া নামাজ গুলোর জন্য আফসোস করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে, আশা করা যায় তিনি ক্ষমা করে দিবেন। এবং পরবর্তী দিনগুলোআর কখনো যেন নামাজ কাজা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
আরো পড়ুন: ছয়টি ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় জেনে নিন
উপসংহার : গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম
প্রিয় পাঠক, পুরো পোস্ট পড়ে কাজা সালাত আদায়ের নিয়ম ব্যাপারে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। আল্লাহর বাণী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস মোতাবেক প্রতিটি নর-নারীর জন্য ওয়াক্ত মত সালাত আদায় করা ফরজ। এত মূল্যবান সালাত কাজা না করে যথাসময়ে আদায় করার জন্য আমরা চেষ্টা করব এই আশাবাদ ব্যক্ত করে পোস্টটি এখানে সমাপ্ত করছি। গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম বিষয়ক পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url