ছয়টি ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়
ডায়াবেটিস একটি বহুমূত্র রোগ, এই রোগের কারণ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবুও এই রোগের কারণ হিসেবে প্যানক্রিয়াস হইতে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন নিঃসৃত না হওয়া বা শর্করা জাতীয় পদার্থের শরীরে উপযুক্ত ভাবে ব্যবহৃত না হওয়াকে ধরা হয়।
দীর্ঘ দিন ঔষধ সেবনে শরীরে মারাত্বক ক্ষতি সাধিত হয়। তাই চলুন ঔষধ ছাড়াই ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। রক্তে চিনি বেড়েছে? সুগার নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে এই ভেষজ গাছগুলি! আশা করছি পুরো পোস্ট পড়ার পর ডায়াবেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আপনি জেনে যাবেন।
ডায়বেটিসের লক্ষণ: ক্ষুধা বৃদ্ধি, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, বারংবার প্রসাব করা, প্রসবের শর্করার প্রভাব, ওজন হ্রাস, শরীরে ফোড়া, চুলকানি, পাচরা হওয়া ইত্যাদি।
পোস্ট সুচিপত্র : ছয়টি ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় জেনে নিন
- নিম পাতা
- পরিচিতি
- ব্যবহার বিধি
- মেথি
- পরিচিতি
- ব্যবহার বিধি
- ডুমুর
- পরিচিতি
- ব্যবহার বিধি
- কৃষ্ণ তুলসী
- পরিচিতি
- ব্যবহার বিধি
- সজিনা পাতা
- পরিচিতি
- ব্যবহার বিধি
- কালোজিরা
- পরিচিতি
- ব্যবহার বিধি
- উপসংহার - ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
1. নিম পাতা
পরিচিতি
নিম বেশ বড় ধরনের গাছ। আবহাওয়ার কারণে ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত লম্বায় বড় হয়। বহু শাখা প্রশাখায় ভরা। খাস কাটা কালো বাদামী রঙের বাকল দ্বারা আবৃত থাকে। পাতা এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হয়। উভয় পাশে কিনারা করাতের মত খাচ কাটা। পাতার রং সবুজ। চৈত্র মাসে পুরাতন পাতা ডাল থেকে পড়ে যায়। ফুলের রং সাদা। নিমগাছ দেখতে একই রকম হলেও এর চারটি শ্রেণি রয়েছে। সাধারণ নিম, ঘোড়া নিম, কার্পাস নিম ও ভুঁই নিম।
ব্যবহার বিধি : ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের নিমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম, এ ক্ষেত্রে কার্পাস নিম ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে 15 থেকে 20 টি নিমের পাতা চিবিয়ে খেলে খুব উপকার পাওয়া যায়। যারা চিবিয়ে খেতে অসুবিধা বোধ করেন, তারা একই নিয়মে নিম গাছের পাতা বেটে পাঁচ থেকে ছয় চামচ পরিমাণ রস করে খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিস বা সুগার নিয়ন্ত্রণ হবেই হবে।
2. মেথি
পরিচিতি
মেথি আমাদের সকলেরই চেনা, রান্নাঘরে ব্যবহার্য একটি প্রয়োজনীয় মসলা বিশেষ। কিন্তু এর ঔষধি গুন কিছু কম নয়। ডাল, তরকারি ইত্যাদিতে মেথি ব্যবহার হয়, আচার মসলা তৈরিতেও মেথি খুব দরকার হয়। খুব সুস্বাদু ও উপকারী।
ব্যবহার বিধি : ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়
প্রতিদিন রাতে 15 থেকে 20 গ্রাম মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ভিজিয়ে রাখা মেথিগুলো পানির মধ্যে ভালো করে কচলিয়ে নিয়ে, কচলানো পানিটুকু কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এই পানি প্রতিদিন সকালে একমাস যাবত পান করলে প্রসাবে শর্করার মাত্রা কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে। মেথি ডায়াবেটিসের মহা ঔষধ।
আরো পড়ুন: জলাতঙ্ক রোগ থেকে বাঁচার উপায় কি
3. ডুমুর
পরিচিতি
ডুমুর একটি মাঝারি আকারের গাছ। লম্বায় খুব একটা বড় হয় না। উচ্চতায় ২০ থেকে ২২ ফুট এর মত হয়। শীতে এই গাছ একেবারে পাতা শূন্য হয়ে যায়। মার্চের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করে। আঙ্গুরের থোকার মতো ডুমুর একসঙ্গে থাকলেও গাছের কান্ড ও ডালের সঙ্গে একেবারে লেগে থাকে। ডুমুর গাছের ডাল কাটলে এবং পাতা ছিঁড়লে ঘন দুধের মত এক ধরনের আঠা বের হয়। এজন্য গ্রামাঞ্চলে একে ক্ষির বৃক্ষ বলে।
ব্যবহার বিধি : ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়
10 থেকে 12 গ্রাম শুকনো ডুমুর পাতা পানিতে ভিজিয়ে বা হিসেবে দিনে দুই থেকে তিনবার সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও ডুমুর ফল সিদ্ধ করে পেঁপের সাথে ভর্তা করে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়। ডুমুর গাছটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মহৌষধ!
4. কৃষ্ণ তুলসী
পরিচিতি
কৃষ্ণ তুলসী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ তবে সুগন্ধযুক্ত, অনেকটা মরিচ গাছের মতো, এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত বাড়ে। কিছু ক্ষেত্রে কান্ড কাঠের মত শক্ত হয়। তবে কাণ্ডের সমস্ত অংশ নরম লোম দিয়ে ঢাকা থাকে। গাছের অধিকাংশ শাখা সরল এবং চারিদিকে ছড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। পাতা এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার আগার দিকটা মোটা এবং বৃক্ষ দেশ ক্রমশ সরু। উভয় পাশে পাতার কিনারা করাতের মত খাছ কাটা। শীতের শুরুতে যখন শিশির পড়তে শুরু করে তখন গাছ তেমন বৃদ্ধি পায় না। তখন শুধু ফুল ফোটে। ফুল চমৎকার সুগন্ধি যুক্ত হয়। ফুল ফোটার তিন সপ্তাহের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সব এলাকাতেই কৃষ্ণ তুলসী গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
ব্যবহার বিধি: ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়
ডায়াবেটিস হলে প্রতিদিন দশটি তুলসী পাতা ও দশটি গুরমারের পাতা পানির সঙ্গে খেলে ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে। লাগবে না ওষুধ, রোজ এই পাতা দুটি জলে মিশিয়ে খেলেই হু হু করে কমবে ডায়বেটিস।
আরো পড়ুন: স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি গর্ভধারণে সমস্যা হয়
5. সজিনা পাতা
পরিচিতি
সজিনা পাতা বহুল পরিচিত বৃক্ষ। কমবেশি ৩০ ফুটের মতো উঁচু। এ গাছের ডাল খুব নরম হয়। পাতা ত্রিপক্ষ যৌগিক অনেকটা তেতুল পাতার মত। তবে আকার খানিকটা বড় হয়। একটি আরেকটির উপর চার থেকে ৭ জোড়া ছোট ছোট পাতা থাকে। ফুল সাদা ও লাল দু প্রকারের হয়। ফল প্রায় এক ফুট লম্বা ও আঙ্গুল মত সরু হয়, এবং তাতে বেশ কয়েকটি ত্রিকোনাকৃতি বীজ থাকে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সজনা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান, বার্মা ও শ্রীলঙ্কাতেও সজিনা গাছ জন্মে। সতিনার আরো একটি শ্রেণি রয়েছে তার নাম নজনি। গাছের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে সজিনা ডাটা নজনের চেয়ে আকৃতিতে অপেক্ষাকৃত সরু। শাঁসও কম থাকে।
ব্যবহার বিধি: ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়
যদিও এই রোগটি একেবারে সারে না। তবে নিয়মিত সজিনা ডাটা খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ হয় কারণ এর মধ্যে রয়েছে ডায়াটারি ফাইবার। যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: কাঁপুনি দিয়ে তুমুল জ্বর ম্যালেরিয়া নয়তো
6. কালোজিরা
পরিচিতি
আমরা প্রায় সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস জানি তিনি বলেন কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ। তাই কালোজিরা কে নিয়ে যুগে যুগে অসংখ্য গবেষণা হয়ে আসছে। এসব গবেষণা থেকে আমরা কালোজিরার আশ্চর্য সব গুণের কথা জানতে পেরেছি। কালোজিরা একটি সু পরিচিত। হয়ে থাকে। এটি এমন সব ভেষজ গুণসম্পন্ন যা সকল ব্যাধির প্রতিষেধক। প্রাচীন মিশর গ্রীক ও পারস্য দেশের গবেষকগণ এর ভেষজ গুণ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন তবে বিভিন্ন দেশে এর পরিচয় এক এক নামে।
ব্যবহার বিধি
এক কাপ মেথি, এক কাপ কালোজিরা, আধা কাপ আনারসের খোসা মিশিয়ে চূর্ণ করতে হবে। অতঃপর আধা চামচ চুর্নের সাথে এক চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে দৈনিক দুইবার সেবন করতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে এই জুস খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে ডায়াবেটিস।
অথবা আধা চামুচ তৈরীকৃত চুর্ন ও এক চামচ কালোজিরার তেল লিকার চায়ের মধ্যে মিশিয়ে দৈনিক দুইবার সেবন করতে হবে এ নিয়মে কালোজিরা তেল সেবন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অত্যন্ত শক্তিশালী ভেষজ উপাদান এটি, একবার পরীক্ষা করেই দেখুন। অবাক হবেন।
উপসংহার - ওষুধ ছাড়াই ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়
প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার পরে ছয়টি ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় এ বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পেয়ে গেছেন। সুতরাং হাতের কাছেই পাওয়া যায় এই ভেষজ গাছগুলো সংগ্রহ করে আজই তৈরী করুন আপনার পছন্দমতো ঔষধটি। আর ডায়াবেটিস মুক্ত জীবন উপভোগ করুন। পোস্টটি সচেতনতামূলক মনে হলে এখনই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে ফেলুন। আরো স্বাস্থ্য বিষয়ক নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url