অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়?

জমি সংক্রান্ত জটিলতা প্রায় সিংহভাগ নাগরিকের। এ নিয়ে জটিলতার শেষ নেই, আর প্রশ্নেরও শেষ নেই। দীর্ঘদিন আগে আমাদের দেশের মানুষ জমি সংক্রান্ত বিষয়টাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিত। তখন জনসংখ্যা কম থাকায় জমি তাদের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। বর্তমানে আমাদের দেশে জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে জমির গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে এই বিষয়টাতে এখন আর মানুষ অসচেতন নেই। সবাই এখন সচেতন। অপরপক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের হয়েছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন। অনলাইন আর ডিজিটাল এর ছোঁয়ায় ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ এখন আপনার হাতের নাগালে। পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন আর জেনে নিন অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয় সংক্রান্ত আপনার প্রশ্নের উত্তর।
অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়?
পোস্ট সুচিপত্র

ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্ন বা কোন বিষয় যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে তা জানার জন্য আপনাকে আর কোন দালালের কাছে যেতে হবে না। আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার ল্যাপটপে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে লগইন করেই আপনি আপনার জমি সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর এবং অজানা বিষয়গুলো সহজেই জেনে নিতে পারেন। এজন্য দেশের সকল মানুষের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়কে সহস্রবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। অনেক কথা বলে ফেললাম এবার চলুন আসল কথায় আসি।


অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়?

বর্তমান সচেতন প্রত্যেকটি নাগরিক এর কাছে জমির রেকর্ড এখন আর অজানা বিষয় নয়। মোটামুটি আমরা এখন প্রায় সকলেই জমির রেকর্ড সম্পর্কে জানি। তবুও সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে একটু বলে নিচ্ছি যে, জমির রেকর্ড হলো, একটি ডকুমেন্ট যেখানে একটি জমির এক বা একাধিক মালিকের জমির পরিমাণ, প্রত্যেক মালিকের প্রাপ্ত অংশসহ যাবতীয় রেকর্ড জমা থাকে। আর তাকে রেকর্ড বা খতিয়ান বলে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪ ধরনের খতিয়ান রয়েছে যথা: ১) সিএস খতিয়ান ২) এসএ খতিয়ান ৩) আরএস খতিয়ান ৪) বিএস/বিআরএস/সিটি খতিয়ান। এই খতিয়ান গুলোর বিস্তারিত বর্ণনা অন্য পোস্টে আলোচনা করা হবে।


অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়?


খতিয়ান কোথায় পাবেন?

তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার জমির রেকর্ড সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে আপনার সেই জমির খতিয়ান প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হল খতিয়ান কোথায় পাওয়া যাবে? জমির খতিয়ান পেতে আগে পোহাতে হতো অসম্ভব রকমের ভোগান্তি। এখন আর সেই ভোগান্তি পোহাতে হয় না। যে কথা আগেই বলেছিলাম অনলাইন ও ডিজিটাল এর ছোঁয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটালাইজেশন এর কথা। অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই সহ নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয় সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য এখন হাতের নাগালে।


আরো পড়ুন : সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ বিস্তারিত জেনে নিন। আপনি পাচ্ছেন তো?


খতিয়ান বা রেকর্ড যাচাই করা

যাইহোক একটি জমির রেকর্ড যাচাইয়ের জন্য আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের eporcha.gov.bd এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তারপর এখানে আপনি একটি অপশন বেছে নেবেন তা হলো আপনি কোন ধরনের খতিয়ান খুঁজছেন? সার্ভের খতিয়ান নাকি নামজারি খতিয়ান? আপনার প্রয়োজনীয় অপশন বেছে নিয়ে বিভাগ জেলা উপজেলা মৌজার নাম সঠিকভাবে বসিয়ে খতিয়ানের তালিকা ফিল্ডে আপনার খতিয়ান নম্বর লিখুন আর অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন। একটু অপেক্ষা করুন আর পেয়ে যান আপনার কাঙ্খিত খতিয়ান টি। এভাবেই করতে পারেন অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই।


অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়?

মালিকের নাম বা জমির দাগ নম্বর দিয়ে খতিয়ান বা রেকর্ড যাচাই


এখানে আরেকটি প্রয়োজনীয় তথ্য হলো, যদি আপনার কাছে খতিয়ান নম্বর না থাকে তাহলে কি করবেন? আপনার কাছে খতিয়ান নম্বর না থাকলেও আপনি আপনার নামিয় জমি খুঁজে পেতে পারেন।

সেক্ষেত্রে খতিয়ানের তালিকা অপশনে নিচের দিকে দেখবেন অধিকতর অনুসন্ধান নামক একটি বাটন রয়েছে সেখানে ক্লিক করুন। এখানে আপনি জমির মালিকের নাম অথবা জমির দাগ নাম্বার দিয়ে অনলাইনে জমির রেকর্ড বা খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারবেন।


অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়?


খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর বা জমির মালিকের নামে খতিয়ান খুজে না পেলে করণিয় কি?

এবার আরেকটি প্রশ্ন হলো, ভূমি সেবার এই ওয়েবসাইটে যদি আপনার খতিয়ান নম্বর জমির মালিকের নাম অথবা দাগ নাম্বার কোনটি দিয়েই আপনি আপনার কাঙ্খিত খতিয়ান খুঁজে না পান সে ক্ষেত্রে কি করবেন? যদি এইরকম সমস্যায় পড়েন তাহলে আপনি এই সাইটেই খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে পারবেন। খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির আবেদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক অনলাইনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যেই আপনি আপনার খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পেতে পারেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন জমির খতিয়ান খোঁজা এখন আর তেমন কোন কঠিন কাজ নয় এটি এখন আপনার হাতের কাছেই ।


নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়?


এবার চলুন আমাদের এই পোস্টের পরের বিষয়ে যাওয়া যাক, আর তা হল নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয় সম্পর্কে।

এই প্রশ্নটি এখন বহুল মানুষের, এই প্রশ্নের প্রধান উত্তর হল, কোন ভূমি মালিক যদি মাঠ জরিপ হতে ৩০ বিধি আপত্তি স্তর তথা ৩১ বিধি আপিল স্তর পর্যন্ত কোন স্তরেই উপস্থিত না হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে এ ধরণের ভুল রেকর্ড হতে পারে। আবার অনেক সময় এমন হয়েছে যে, চলমান ভূমি জরিপে, অনলাইনে অনেকগুলো ডাটা প্রসেসিং এর সময় জমির বিভিন্ন তথ্য এলোমেলো হয়ে গেছে যার ফলে দেখা গেছে কিছু কিছু মানুষের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে আছে, অথবা, জমির পরিমাণে ভুল হয়েছে, অথবা জমির মালিকের অংশ ভুল হয়েছে। এই সমস্ত ভুল পরিলক্ষিত হলে যা করবেন সেটি হলো-

রেকর্ড চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা করতে হবে । সংশ্লিষ্ট জেলায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল না থাকলে কিংবা আবেদনের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেলে বিজ্ঞ দেওয়ানী আদালতে স্বত্ত্ব ঘোষণার জন্য মামলা করে খতিয়ান বা রেকর্ডের যাবতীয় ভুল সংশোধন করে নিতে পারবেন।

উপসংহার : অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়?

প্রিয় পাঠক, অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করণীয়? বিষয়ক পোস্টটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনি আপনার অতি মূল্যবান জমি সংক্রান্ত কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url