গোল মরিচ খাওয়ার নিয়ম | গোল মরিচের উপকারিতা | যে রোগের মহাঔষধ
গোলমরিচ আমাদের রান্নাঘরের অতি প্রয়োজনীয় ও পরিচিত একটি মসলা। এটি দেখতে ছাট হলেও প্রচুর অন্যান্য ঔষধিগুনাগুণ বিদ্যমান। এটি মানুষের প্রতি আল্লাহ পাকের এক বিশেষ অনুগ্রহ। আজ আমরা জানবো গোল মরিচ খাওয়ার নিয়ম | গোল মরিচের উপকারিতা | যে রোগের মহাঔষধ সম্পর্কে। গোলমরিচ দ্বারা শ্লেম্মা কাশি, উদর, বিকার, পাচন শক্তি, দুর্বলতা, গ্যাস, চর্ম রোগ, ফোঁড়া ইত্যাদি সহ আরো বিভিন্ন চিকিৎসায় আমাদের দেশের চিকিৎসকগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এটির কিছুটা ঝাল স্বাদটি, উগ্র জঠরাগ্নিকে সবল করতে সহায়তা করে। এটি কফ ও বাত ব্যথা নাশক, গরম ও পিত্তকারক এবং কৃমি নাশক হিসেবে প্রচুর ব্যবহার হয়ে থাকে।
পোস্ট সুচিপত্র
বিভিন্ন ভাষায় গোল মরিচের নামসমূহ
বাংলা নাম-গোলমরিচ
ইংরেজী নাম-Black pepper
ইউনানী নাম-ফিলফিল সিয়াহ
আরবী নাম ফুলফুল
বৈজ্ঞানিক নাম- Piper nigrum linn.
গোলমরিচ পরিচিতি
গোল মরিচ খাওয়ার নিয়ম | গোল মরিচের উপকারিতা | যে রোগের মহাঔষধ : ব্যবহার ও উপকারিতা
এটি বিভিন্ন রোগের মহাঔষধ হিসেবে বহুল পরিচিত একটি মসলা। এটির গুনাগুন এতো বেশি যে, এটি খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রকম অজানা রোগ আমাদের অজান্তেই সেরে যায়। দেহের রোগ প্রতিরেধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরকে করে চাঙ্গা, ফুরফুরে ও পাতলা। চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই আমাদের অতি পরিচিত এই সামান্য মসলা আমাদের কী কী কাজে লাগলে পারে। বা এটির ব্যবহার বিধি সম্পর্কে।
মাথা ঘোরানো রোগে মহাঔষধ
পরিমাণ মতো গোলমরিচ চূর্ণ, একটু চিনি ও ঘি একসঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে মাথা ঘোরা রোগ ভালো হয়। আর যারা আত্ম ভোলা লোক, একটুতেই সব কিছু ভুলে যান, তাদের জন্য এটি খুবই প্রয়োজন। ক্ষণে ক্ষনে ভুলে যাওয়া রোগ বর্ণিত উপায়ে কিছু দিন সেবন করে দেখুন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন এর উপকার সম্পর্কে।
আরো পড়ুন : গ্যাসের ঔষধ কে না বলে নিয়ে নিন প্রাকৃতিক সমাধান
জ্বর হলে ব্যবহার
জ্বর আমাদের দেহের অতি সাধারণ একটি রোগ। আর জ্বর হলেই আমরা ছুটি প্যারাসিটামল আর হাই এন্টিবায়োটিকের দিকে। যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কখনোই আমরা প্রাকৃতিকভাবে জ্বর নিরাময়ের চেষ্টা করি না। কখনো জ্বর হলে, একবার এই গোল মরিচ দিয়ে বানানো ঔষধ সেবন করে দেখতে পারেন। ৩-৬ গ্রাম গোলমরিচ আধা লিটার পানিতে ফুটিয়ে নিন । পানি ফুটে যখন আট ভাগের এক হয়ে যাবে তখন তাতে ২০ গ্রাম চিনি মিশিয়ে সেবন করুন। এতে সাধারণ জ্বর নিরাময় হয়।
মাড়ি ফোলায় ব্যবহার
অনেক সময় আমাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়। আর প্রচন্ড ব্যথা হয়। এরকম হলে এই মসলাটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। পানিতে ভালো করে গোলমরিচ ফুটিয়ে নিন। অতঃপর ঐ পানি দিয়ে কুলি করলে মাড়ির ফোলা কমে যায় এবং মাড়ি শক্ত ও সুস্থ হয়। ব্যথাও কমে যায়।
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে অত্যান্ত কার্যকরী
দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে, বা একটানা কোন কাজ অনেকক্ষণ করার পর আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। এই যেমন ধরুন মাথা ধরা, মাথা ঘোড়াসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের স্মরণ শক্তি কমে যায়। এরকম সমস্যায় মস্তিস্কের ক্ষমতা ও সুস্থতা বাড়াতে এবং স্মরণশক্তি বাড়াতে গোলমরিচের সঙ্গে ব্রাহ্মী শাক মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। অথবা সামান্য ঘিয়ে ৩-৪ গ্রাম ব্রাহ্মী শাক সিদ্ধ করে নিন, এবার ঐ পানিতে চূর্ণ করা গোলমরিচ ও চিনি মিশিয়ে সেবন করুন। খুবই উপকার পাবেন ইনশাআল্লাহ ।
আরো পড়ুন : যৌন জীবনকে করুন আরো শান্তিময়। শতভাগ পুরুষত্ব ফিরিয়ে আনতে যাদুকরী এই গাছ সম্পর্কে জানুন
সর্দি লাগলে ও কাশিতে মহাঔষধ
সর্দি বা ঠাণ্ডা লাগলে, নাক দিয়ে পানি ঝরলে গোলমরিচ মিশিয়ে গরম দুধ পান করলে অনেক আরাম পাওয়া যাবে যদি খুব ঘন ঘন সর্দি লাগে বা বার বার হাঁচি পড়ে তাহলে গোলমরিচের সংখ্যা প্রতিদিন একটি করে বাড়িয়ে ১৫ দিনে ১৫টি করুন। তারপর প্রতিদিন একটি করে কম করতে করতে একটিতে আসুন। এভাবে সর্দি ঠাণ্ডা লাগা এক মাসে সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ। যদি সর্দির সঙ্গে জ্বর ভাব বা হালকা জ্বর থাকে। তাহলে ৫-৬টি গোলমরিচ, ৭-৮টি তুলসী পাতা, লবঙ্গ, এক ইঞ্চি পরিমাণ আদা একটা এলাচ সবগুলোকে ভালো করে ফোটান। তারপর তাতে দুধ দিয়ে চায়ের মতো গরম গরম পান করুন। এভাবে দিনে তিনবার পান করতে হবে। এতে ঘাম এবং শরীর হালকা বোধ হবে। জ্বর থাকলে তা সেরে যাবে।আধা চামচ গোলমরিচ চূর্ণ ও আধা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার চেটে সেবন করতে হবে। এতে কাশিতে উপকার পাওয়া যায়।
চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে মহাঔষধ
বিভিন্নভাবে আমাদের চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়।আর চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে প্রতি অত্যন্ত কাজ দেয়। আধা চামচ ঘি, আধা চামচ গোলমরিচ চূর্ণ ও আধা চামচ মিছরি নিয়ে সবগুলোকে একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে চেটে খান। এতে চোখের জ্যোতি বাড়বে এবং ক্ষীণ দৃষ্টি ভালো হবে ইনশাআল্লাহ ৷
আমাশয়ে কার্যকরী
ফুড পয়জনিং জাতীয় সমস্যা সমাধানে বা আমাশা হলে এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এর ঔষধি গুনাগুন আপনাকে অবাক করে দেবে। আধা চামচ গোলমরিচ চূর্ণ মধুর সঙ্গে চেটে সেবন করুন। তারপর এক গ্লাস ঘোল পান করুন। এতে দীর্ঘদিনের পুরনো আমাশায় ভালো হবে। এটি দিনে তিনবার করে সেবন করতে হবে।আরো পড়ুন : ছয়টি ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় জেনে নিন
রাতকানা রোগে অত্যান্ত কার্যকরী
এই রোগটি আমাদের দেশে বহুকাল আগে প্রচুর দেখা যেত। এখন সচরাচর এই রোগটি নেই। রাতকানা রোগে গোলমরিচ দিয়ে বানানো ওষুধ আপনার কাজে লাগলেও লাগতে পারে। দই বা মধুর সঙ্গে গোলমরিচ মেড়ে চোখে কাজল পড়লে রাতকানা রোগ ভালো হয় ।পেট ব্যথায় ব্যবহার
বিভিন্নভাবে আমাদের পেটে ব্যাথা হতে পারে। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড গ্রহণ, ভাজাপোড়া খাবার অথবা দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে আমাদের পেটে ব্যথা হতে পারে। এ সমস্ত সমস্যায় গোলমরিচ অসাধারণ কাজ করে। আদা ও লেবুর রসের মধ্যে এক গ্রাম গোলমরিচ চূর্ণ মিশিয়ে সেবন করলে সকল ধরনের পেটের ব্যথা প্রশমিত হয় ।
চর্মরোগ নিরাময়ে মহাঔষধ
আমাদের শরীরের চর্ম রোগের অভাব নেই। আমরা প্রতিনিয়ত ভিন্ন রকম চর্ম রোগ লক্ষ্য করি। যেকোনো ধরনের যৌন রোগে ব্যবহার করতে পারেন সম্পূর্ণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত প্রাকৃতিক ওষুধটি। গোলমরিচ ঘিয়ে মিহি করে পিষে নিয়ে লেপন করলে দাদ, চুলকানি ফোঁড়াসহ ইত্যাদি বিভিন্ন চর্মরোগ নিরাময় হয়। ছোট ফোঁড়া হলে দিনে ২ বার ব্যবহার করলে বসে যায় ।
পেটে গ্যাস হলে
পেটে গ্যাসের সমস্যা আমাদের প্রায় সকলের। গ্যাস হলেই আমরা ছুটে যাই গ্যাসের ট্যাবলেটের দিকে। আর এই গ্যাসের ট্যাবলেট গুলো আমাদের কিডনিকে প্রতিনিয়ত নষ্ট করছে। তাই প্রাকৃতিকভাবে এর সমাধান পেলে সমস্যা কি? পেটে গ্যাস হলে এক কাপ পানিতে অর্ধেক লেবুর রস, আধা চামচ গোলমরিচ চূর্ণ ও আধা চামচ বিটলবণ মিশিয়ে নিয়ে কয়েকদিন নিয়মিত সেবন করলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
গলা বসে গেলে বা ব্যাথা হলে মহাঔষধ
গলা বসে যাওয়া বা গলা ব্যাথায় গোল মরিচের মারাত্বক উপকারী দিক সম্পর্কে আমরা আদিকাল থেকেই অবগত আছি। গলা বসে যাওয়া বা গলা ব্যাথায় হলে আমাদের দাদী নানীরা সর্বপ্রথম যে ঔষধ বাতলে দিতো তা হলো গোল মরিচ চিবানো। এই সমস্যায় আরো ভাল ফল পাওয়া যাবে যদি, ঘি ও মিছরির সঙ্গে গোলমরিচের চূর্ণ মিশিয়ে চেটে খাওয়া হয়। এটি সেবনে গলার স্বর আবার সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়। এতে গলার স্বরও মধুর হয়। ৮-১০টি গোলমরিচ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে ঐ পানিতে গড়গড়া করলেও উপকার পাওয়া যায়।
বদ হজম হলে ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে মহাঔষধ
বদ হজম হলে লেবু কেটে দু'ফালি করে নিন। অতঃপর তাতে গোলমরিচ ও বিটলবণের চূর্ণ লাগিয়ে নিন এবং আগুনে গরম করে চুষে চুষে সেবন করুন। এতে বদহজম নষ্ট হবে এবং পেট হালকা বোধ হবে। হজম শক্তি যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, ঠিক মতো খাবার হজম না হয় এবং পেটের মধ্যে পচতে শুরু করে তাহলে পাচন শক্তি বৃদ্ধির জন্য জিরা, শুঁঠ, সৈন্ধব লবণ, পিপুল, গোলমরিচ সবগুলো সমপরিমাণে নিয়ে চূর্ণ করে নিন। প্রতিবার খাবারের পর এক চামচ করে চূর্ণ মুখে দিয়ে পানি পান করুন। এতে খাবার দ্রুত হজম হবে।
আরো পড়ুন : মোটা হওয়ার ভেষজ ঔষধের নাম জেনে নিন, রোগা থেকে মোটা হওয়ার ভেষজ উপায়
ম্যালেরিয়ায় ব্যবহার
তুলসী ও মধুর সঙ্গে গোলমরিচের চূর্ণ মিশিয়ে সেবন করলে ম্যালেরিয়া রোগে উপকার পাওয়া যায়।
প্রসবান্তে ব্যবহার
গ্রামঞ্চলে প্রসূতিকে সন্তান প্রসবের পর এক মাস পর্যন্ত ভাতের সঙ্গে ঘি ও গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এতে তাদের দুর্বল স্নায়ু দ্রুত সুস্থ্য সবল হয়ে ওঠে।
উপসংহার : গোল মরিচ খাওয়ার নিয়ম | গোল মরিচের উপকারিতা | যে রোগের মহাঔষধ
প্রিয় পাঠক, পুরো পোস্টটি পড়ে নিশ্চই জানতে পেরেছেন, গোল মরিচ খাওয়ার নিয়ম | গোল মরিচের উপকারিতা | যে রোগের মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। হাতের কাছেই পাওয়া এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে এড়িয়ে যাবেন না। ছোট খাটো বিভিন্ন রোগে এটি আসলেই মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। পার্শপ্রতিক্রিয়া যুক্ত সকল ঔষধ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এড়িয়ে চলুন। পোস্টটি কেমন লাগলো জানিয়ে ও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন আর বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url