তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব : মানব জীবনে ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কিত তথ্যাবলী
ধর্মতত্ত্ব নিয়ে আমাদের জানার শেষ নাই। সেই আদিযুগ থেকেই ধর্মতত্ত্ব বিষয়টিতে তর্ক-বিতর্কর চলেই আসছে। আজ আমি আপনাদের এমন একটি পোস্ট উপহার দিতে যাচ্ছি এতে থাকছে ধর্মতত্ত্বর উপরে একটি তথ্য বহুল আলোচনা। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব : মানব জীবনে ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কিত তথ্যাবলী বিষয়ের পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পুরোটা পড়ে নিন আর এতে ধর্মতত্ত্বর উপরে আপনি অনেক কিছুই জানতে পারবেন। কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব : মানব জীবনে ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কিত তথ্যাবলী
ধর্ম মানে ধারন করা। যা ধারন করলে ইহজীবনে শান্তি ও স্বাভাবিক জীবন যাত্রা নির্বাহ ও পরলোকে মুক্তির নিশ্চয়তামূলক সনদপত্র লাভ করা যায় তাকেই সত্যিকার অর্থে ধর্ম নামে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। ধর্ম মানুষের স্বাভাবিক জীবন নির্বাহ থেকে ভিন্ন কোন কিছুর নাম নয়। মানুষের সহজ জীবন যাত্রার সাথে যেসব সহজ প্রক্রিয়ার মিল পরিলক্ষিত হয় বস্তুত সেটাই ধর্ম। অর্থাৎ সহজ কথায় যে মেশিনে যে তেল প্রয়োগ সাপেক্ষ্য, সে মেশিনে সেই তেলই প্রয়োগ করতে হবে, তবেই সেই মেশিনে দীর্ঘস্থায়ীত্ব লাভ তথা ভাল সার্ভিস প্রদান করতে পারে। কুইনিনের মতো তিক্ত ঔষধ যেমন মানুষের রসনা সহজভাবে গ্রহণ করতে চায় না। তেমনি মানুষের সহজ জীবন যাত্রার সাথে যেসব কর্মকান্ডের মিল নেই অথচ সেই সব প্রক্রিয়াকে জোর করে পালন বা গ্রহণ করার মত জবরদস্তিমূলক নির্দেশ চাপিয়ে দেওয়া হয়, সে গুলো ধর্ম নামে আখ্যায়িত হতে পারে না।
সেই আদিম যুগে মানুষের অনুন্নত জীবন ব্যবস্থা ও রুচী অনুসারে মানুষের ধর্মীয় জীবনের ব্যবস্থা ছিল। রুচি বদলের সাথে সাথে ধর্ম ব্যবস্থার উন্নয়নেরও প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল আর সে কারনেই একলাখ বা দুলাখ চব্বিশ হাজার প্রেরিত পুরুষের আগমনই বলেন বা তাদের মতে তেত্রিশ কোটি দেবতার আবির্ভাবই বলেন সকলের আগমনের উদ্দেশ্য কিন্তু একই। আর তা হলো যুুুুুুগে যুগে মানুষের পরিবেশগত উন্নতির সাথে রুচি মাফিক ধর্মীয় জীবন প্রতিষ্ঠা করা।
ধর্মে নতুনত্ব কতোটা প্রয়োজনীয়
প্রাথমিক অবস্থায় মানুষ নাকি গুহায় বাস করত, তখন নিছক একটা ধর্মমতই ছিলো আর তখনকার মানুষ সানন্দে সেই ধর্মপালন করতেই অভ্যস্থ হায়ে পড়েছিলো। অথচ তারা ধারনাই করতে পারেনি যে, এর চেয়েও ভাল জীবন ব্যবস্থা বা পরিরেশের সৃষ্টি হতে পারে। এরপর যখন গুহার পরিবর্তে খরের ঘরের সৃষ্টি হলো তখন হয়তোবা সকলেই সেটাকে সর্বশেষ উন্নত জীবন ব্যবস্থা বলে মনে করতে লাগলো। কিন্তু টিনের ঘরের কথা তারা কস্মিনকালেও হয়তোবা কল্পনা করেনি কিন্তু পরিশেষে মানুষের উন্নত বিবেক ও রুচী সৃষ্টি হওয়ায় তারা টিনের ঘরের ব্যবস্থা করে ফেল্লো।
পরিনামে তাদের রুচি অনুসারেও পরিবেশ মোতাবেক অবশ্যই যে কোন একজন প্রেরিত পুরুষ, ¯্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং সকল মানুষ সানন্দে সেই যুগেরও সেই প্রেরিত পুরুষের আনিত ধর্মমত-ই পালন করে চলেছিলো। এরপর যখন মানুষের আরোও বুদ্ধির বিকাশ ঘটল তখন তারা ইট বা পাথর দিয়ে আধুনিক ও অভিনব কায়দায় দালান-কোঠা নির্মাণ করতে লাগল। অথচ সেই সব টিনের ঘরবাসীগণ কখনো কল্পনা করতে পারেনি যে ঘরের চেয়েও উন্নত কোন আবাসস্থল সৃষ্টি হতে পারে। আর তাদের রুচীর উন্নয়নের সাথে সাথে পূর্বেকার ধর্মমতের পরিবর্তে আরো আধুনিকতর ধর্মমতসহ আর একজন প্রেরিত পরম সৃষ্টি বার্তা প্রেরন করে দিলেন। যাহোক এমনিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল মেটে কুয়া, পাঠ কুয়া পরিশেষে মানুষের বিবেক বিকাশের সাথে সাথে সৃষ্টি হলো শক্তিশালী ও মজবুত ইন্দিরা, অথচ তৎকালীন মানুষ কিন্তু ধারনাই করতে পারেনি যে, পাঠ কুয়ার চেয়ে আরোও কিছু সৃষ্টি হতে পারে। অথচ পরিশেষে ইন্দিরাও আর টিকে থাকলোনা এরপর সৃষ্টি হলো টিউবওয়েল, মোটর-পাম্প, ঝরনা ও আরো উন্নত অনেক কিছু। কিন্তু এত আধুনিকতা ও সুবিধা প্রাপ্তির পরেও যদি কোন লোক মেটে কুয়ার পানিই পান করতে চায় তবে তাকে মুর্খ, রুচি বিকৃত, অসভ্য ও অপদার্থ ছাড়া কি ধারনা করা যেতে পারে?
আরো পড়ুন : নারীরা এতো অবাধ্য কেন? আসল রহস্য জেনে নিন
এরপর আসা যাক চাষাবাদ পদ্ধতির কথায় আগে যখন শক্তিশালী উন্নত পুষ্টি সমৃদ্ধ আউষ ধানের আবাদ হচ্ছিল তখন হয়তো কোন কৃষকই ধারনা করেনি যে, এ আউষ ধানও একদিন থাকবেনা এর পরেও আসতে পারে অধীক ফলনশীল আরো উন্নত জাতের অন্য কোন ধান। সেই দোয়াত কলম, ফাউনটেন পেন-ই-বা আজ কোথায়? সেই আনন্দঘন গরুর গাড়ীর অন্তর্ধানও কি মেনে নেবার মত? মানুষের ঘারে চরে বেড়ানো সেই পদ্ধতি কি এ যুগে টিকে থাকার মত?
যে যুগে সৃষ্টি হলো এরোপ্লেন, রেলগাড়ী, বাস, মাইক্রোবাস, আরো কত উন্নত যানবাহনের ছড়া ছড়ি এর পরেও যদি কোন লোক গরুর গাড়ীতে আরোহনের প্রবনতা নিয়ে অথবা তাতে আরোহন করে টুকুস টুকুস করে এক ঘন্টার পথ দশ ঘন্টায় অতিক্রম করতে রাজী হয় তবে কষ্মিনকালেও তাকে কেউ ভদ্রলোক বা সম্মানের পাত্র হিসাবে মনে করবে না। সেই শক্তিশালী কাসার বদনা, কাসার গ্লাস, ঝকঝকে কাসার থালা, হারা, খরা, সেই সব পৌরানিক তৈজসপত্রকে আধুনিক পরিবেশ ও পৃথিবী টিকিয়ে রাখতে পেরেছে কি?
পৃথিবীতে পথ প্রদর্শক অবতীর্ণ সংক্রান্ত ভিন্নতার প্রয়োজনীয়তা
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত সত্য উপমাগুলোর আলোকে এবার আসল প্রসঙ্গে ফিরে আসতে পারি। একলাখ বা দুলাখ চব্বিশ হাজার নবী বা প্রেরিত পুরুষ তাদের মতে তেত্রিশ কোটি দেবতা একই সঙ্গে পৃথিবীতে পথ প্রদর্শক হিসাবে অবতীর্ণ হননি। একজন যে ধর্মমত বা জীবন বিধান নিয়ে স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত হয়েছিলেন দু-এক শতাব্দীর পরে মানুষের রুচী ও পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে সেই পুরুষের ধর্মমত ও নীতিমালা শেষের দিকে এসে যুগোপোযোগী হিসাবে আর বিবেচিত না হওয়ায় তার মৃত্যুর পর আর একজন প্রেরিত পুরুষ মানুষের পরিবেশ মাফিক রুচী ও যুগোপযোগী ধর্মমত নিয়ে প্রেরিত হতে থাকেন।
আরো পড়ুন : Homosexuality and Porn : নগ্নতা ও সমকামিতা 'র প্রভাব থেকে আপনি মুক্ত তো?
এমনিভাবে মানুষের মাঝে তাদের রুচি ও পরিবেশের চাহিদায় নিত্য নতুন ধর্মমতের রদবদলের কারণে লক্ষ লক্ষ বছর অতিবাহিত হবার সময়ক্ষেপনের মধ্য দিয়ে এত অধিক প্রেরিত পুরুষের সংখ্যা দাড়িয়ে ছিল। ধর্মকে যুগোপোযোগী করার প্রয়োজন না থাকলে সেই গুহাবাসীগন খরেড় ঘর, টিনের ঘর ও পরিশেষে দালানবাসের উপযোগী না হয়ে সেই আদিম গুহা নিয়েই পড়ে থাকতো। আচ্ছা বলুনতো এই দালানের যুগে দালানে বাস করা পরিত্যাগ করে কেউ যদি সেই গুহাবাসের মোহ পরিত্যাগ করতে না পারে তবে তাকে কি কেউ স্বজ্ঞান মানুষ বলে বিবেচনা করতে পারে? মাইক্রোবাসে আরোহন করার অনিহায় কেউ যদি সেকেলেও অনুন্নত গরুর গাড়ীতে আরোহন করতে চায়, তবে তাকে কি কেউ সভ্যজগতের মানুষ বলে গন্য করতে পারে?
পৃথিবীর পরিবেশ ও মানুষের রুচি মাফিক পথ প্রদর্শকের আবির্ভাব
যাহোক, একলাখ বা দু লাখ প্রেরিত পুরুষের প্রেরনের প্রেরনার কারণ এটাই যুগের পর যুগ তারা পৌরাণিক আধুনিক তথা অত্যধুনিক যুগোপোযোগী ধর্মমতসহ প্রেরিত হতে হতে উপরোক্ত সংখ্যা দাড়িয়েছিল। আর কারণেই ধর্ম গ্রন্থের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১০৪ খানায়, বেদের সংখ্যা যদিও চার খানা কিন্তু তা একই সময়ে রচিত। এমনি ভাবে মানুষের পরিবেশ ও রুচি মাফিক প্রেরিত পুরুষ আসতে আসতে সকল বিশ্ববাসী মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য একমাত্র ধর্মমত প্রতিষ্ঠার জন্য।
সর্বশেষ যে প্রেরিত পুরুষ বা মহামুনী প্রেরিত হয়েছিলেন ঐতিহাসিক সত্যতাসহ সেই মহামূনীর নাম হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) যার সর্বশেষ আগমন প্রসঙ্গে পুর্বেকার তিনটি আসমানী গ্রন্থ স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এছাড়াও প্রায় দশ হাজার বছরের পুরাতন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ঋক বেদ ৩৬৫ পৃষ্ঠায় নিহিতং গুহায়ং..... শ্লোকের মাধ্যমে বিশে^র সব শেষ মুণির আগমন বার্তা ঘোষনা করেছেন। এবং সেই মহামুনির ধর্মমত ব্যতিরেকে যে বাঁচার মুক্তির উপায় নেই তারও সাবধান বানী উচ্চারণ করেছেন। এমনিভাবে ইঞ্জিল বা বাইবেল কিতাবেও তাদের অনুসারীদেরকে পরবর্তী সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ সেই প্রেরিত পুরুষের মত ও পথ গ্রহনের নির্দেশনা দান করেছেন।
এরপরেও বিভিন্ন ধর্মের সম্মানিত অনুসারীগণ যদি তিনি (মোহম্মদ-সাঃ) সর্বশেষ প্রেরিত পুরুষ বা মহামুনি কি-না? এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রাখেন তবে তাদের প্রতি আমার আবেদন এই যে, সমগ্র পৃথিবীর ঐতিহাসিক সত্যতাসহ তারা যেন তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেন যে, তিনি ব্যতিত ঐতিহাসিক সত্যতার ভিত্তিতে আরোও কোন প্রেরিত পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন কিনা। ঐতিহাসিক সত্যের আলোকে আমরা জানি তিনি ব্যতিত আর কেউ জন্ম গ্রহণ করেননি । আর যদি তিনি ব্যতিত কেউ জন্ম গ্রহণ না করে থাকেন তবে তিনি বিশ^বাসী সকল মানুষের সর্বশেষ মহামুনি বা প্রেরিত পুরুষ।
এবার বলতে চাই কেউ যদি ইঞ্জিল (বাইবেল), জবুর বা হিন্দু ধর্মে বেদের অনুসারী হয় তাদেরকে কি সেই গ্রন্থের নির্দেশ মানতে হবে না? আর যদি তারা ধর্মপ্রীত বা গোরামীর কারণে তা-না মানেন তবে তারা দুটি কারণে অপরাধী (ক) তাদের অনুসরণীয় গ্রন্থের নির্দেশনা মানা (খ) যাকে সেই গ্রন্থে মানতে বলা হয়েছে তাকে না মেনে পথ ভ্রষ্ঠ থাকা।
এমনিভাবে পৌরাণিক থেকে আধুনিক ও আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক হিসাবে পৃথিবীর সর্বশেষ প্রেরিত পুরুষরুপে আগমন করলেন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আর সর্বশেষ যুগোপোযোগী করে তার প্রতি অবতীর্ণ করা হল বিশ্বের সর্বশেষ ধর্ম গ্রন্থ আল কোরআন।
এই প্রেরিত পুরুষ কোন সম্প্রদায়ের নির্দিষ্টভাবে আগমন করেননি তিনি বিশ্বের সকল সম্প্রদায়ের সকল ধর্মের তথা সকল মানুষের নবী। অত্যাধুনিক রুচী অনুসারে এই শেষ ধর্ম গ্রন্থ তার উপর ২৩ বৎসরে অবতীর্ণ হয়েছিলো, প্রকাশ থাকে যে, যেদিন থেকে তার উপর এই গ্রন্থের প্রথমবানী অবতীর্ণ হলো সেই দিন থেকে পৃথিবীর সকল পৌরানিক ধর্ম গ্রন্থের আইন বা নীতিমালাসমুহ বাতিল বলে পরিগনিত হল। এর পরেও যদি কোন জাতি আগের ধর্মগ্রন্থের মতের অনুসারী হয়ে থাকতে চায়। তবে তারা যেন তাদের ধর্মগ্রন্থের নির্দেশকেই অমান্য করল। ঠিক যেন বর্তমান বাজার সংবিধানকে অমান্য করে শতাব্দীর পূর্বেকার কোন প্রাক্তন রাজার সংবিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে বর্তমান রাজার সংবিধান আমান্যের কারণে রাজদ্রোহীর অপরাধের মতো অপরাধী হল। এটা ঠিক যেন আধুনিক উন্নত স্কীমের আবাদ পরিত্যাগ করে অতীতের কম ফলনশীল আউষের আবাদ করে সেই ধানকে সার-পানি দ্বারা পরিচর্যা করার পন্ডশ্রমের মতো।
আরো পড়ুন : কালো ও ফর্সা মেয়ের পার্থক্য জানলে অবাক হবেন।
হ্যা, সেই সব ধর্মগ্রন্থের অনুসারীদেরকে ধর্মান্তর না হবার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বটে কিন্তু সেটা সেই সময়ের সেই গ্রন্থের সময়সীমার মধ্যে তা পরিত্যাগ করে অন্য কোন ধর্মে দাখিল হবার নিষেধাজ্ঞার কথা। এটা এক প্রকার সাময়িক ব্যাপার যেমন কারোও টাইফয়েড হলে, তাকে বারণ করা হয় তুমি কখনই ভাত খেও না কিন্তু জ্বর অপসারীত হলেও কি তাকে সেই নির্দেশের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে?
প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে যীশু খৃষ্ঠ, বুদ্ধদেব, রাম-কৃষ্ণ ও আরো অন্যান্য মহাপুরুষ বা অবতারদের সেই সব মুল্যবানবানীর কি কোন মুল্য থাকবেনা? উত্তরে বলা যায় মুল্য থাকবেনা কেন? অবশ্যই থাকবে তবে মাত্র পঞ্চাশ বছর আগের সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্রের সাহিত্যকে মুল্যায়ন করা হয় বটে তবে আধুনিক পাঠ্য সিলেবাস হিসাবে নয় বরং সে গুলো জ্ঞানের সাহিত্য হিসাবে মুল্যবান কিন্তু নতুন সিলেবাসের মানদন্ডে মুল্যবান নয়।
যেমন নজরুল, কবিগুরু, সত্যেন্দ্রনাথ ও আরোও অনেক লেখকের মহামূল্যবান লেখা বর্তমানে আমরাও পড়ে জ্ঞান লাভ করি বটে কিন্তু বর্তমান আধুনিক সিলেবাস অনুসারে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেই সব প্রাক্তন সাহিত্যের সিলেবাস বহির্ভূত কোন লেখা স্বর্ণ সম্ভূত মূল্যবান পদ্ধতিতে কোন ছাত্র বা ছাত্রী পরীক্ষায় লিখলেও পরীক্ষক তাকে একটি নম্বরও দিবেন না। পরীক্ষক যদিও জানেন রবীন্দ্র, শরৎ, বঙ্কিম বা মোশারফের লেখা অত্যান্ত মূল্যবান।
তেমনিভাবে বর্তমান রাজ পিতা বা রাজ মাতার সম্মান আছে বটে কিন্তু অভিষেকান্তে তাদের সন্তানকে যেদিন থেকে সিংহাসনে বসানো হয়েছে, সেদিন থেকে যুবরাজের আইনই গ্রহণযোগ্য হবে কিন্তু রাজ পিতার আমলের কোন আইনই আর গ্রহণযোগ্য নয়। পাখড়া যুক্ত কাঠের খড়মের মোহ অনেকেরই আছে কিন্তু সহজসাধ্য স্পঞ্জ সেন্ডেল এর আবিষ্কারের পরে ঐ খড়মকে কেউ আর স্নেহের দৃষ্টিতে দেখছে না। বৈজ্ঞানিক তথ্যের অনেক তথ্য, চিকিৎসা সাস্ত্রের অনেক মতবাদ ও সত্য প্রাণপ্রিয় খনার বচনও আজকের যুগে অচল।
ধর্মে নতুনত্বের প্রয়োজনীয়তা
যাহোক, পৃথিবী গতিশিল আর সে স্বাভাবিকভাবে নতুনত্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এমনকি সাধারণ পোষাক-পাতির অবস্থা পর্যন্ত আজকাল আগের পরিমাপে টিকে নেই। তাই দেখা যায় অনেক পৌরণিক ধর্মমত ও সেইসব ধর্মমতের পূজার উপকরণগুলো পর্যন্ত প্রকৃতি যোগান দিতে পারছে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঝোপ-জঙ্গল কমে যাওয়ার ফলে তৎকালিন যুগের বা ধর্মের পূজার সামগ্রীসকল যোগাড় করতে পূজারী মহোদয়দের আজ প্রাণান্ত অবস্থা। অনেক ধর্মের ধর্মীয় কারণে গায়ে মাথায় উল্কি অংকন করতে হয় অথচ এই আধুনিক বিশ্বে ঐসব আল্পনা অংকন করে ঘরে বসে থাকা ছাড়া জনসমাজে বের হওয়া লজ্জাস্কর বিষয় বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। তাই জ্ঞানের কথা হলো আধুনিকতাকে যেমন অস্বীকার করা যায় না তেমনি আধুনিক যুগোপোযোগী স্রষ্টা নির্দেশিত সত্য ও আধুনিক ধর্মকে অস্বীকার করা যায় না।
তাই এবার দাড় করানো হচ্ছে বেদ, বাইবেল ও কোরআন স্বীকৃত বর্তমান বিশে^র একমাত্র প্রেরিত পুরুষের প্রেরীরত্বের ঐতিহাসিক প্রমানসমূহ।
১। সেই মহামুনি বা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মক্কানগরের কোরেশ বংশে ৫৭০ খ্রি. আরবী মাসের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার মা আমিনার গর্ভে ও পিতা আব্দুল্লাহর ঔরষে জন্মগ্রহন করেন ঐতিহাসিক সত্য।
২। তার রওজা শরীফ যে মদিনায় অবস্থিত তাও বাস্তব ও প্রদর্শণযোগ্য।
৩। তার উপর যে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে ৬,৬৬৬ আয়াত বিশিষ্ঠ আল-কোরআন নামে বর্তমান বিশ্বের একক ধর্ম গ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে কোরআন আমাদের মাঝে বিদ্যমান আর বিশ্ববাসী মানুষ তা প্রতিনিয়ত পাঠ করে চলেছে।
৪। তার মুখ নিসৃত বাণীসমূহ যে হাদিস নামে প্রসিদ্ধ সেই সব হাদিস গ্রন্থ ও আমরা বিশে^র সকল মানুষ নিত্য প্রয়োজনে পাঠ করছি। বা তা আমাদের মাঝে সংরক্ষিত তা অস্বীকার যোগ্য নয়।
৫। তিনি যে প্রেরিত পুরুষদের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেরীত পুরুষ তা আসমানি গ্রন্থ কোরআন দ্বারা স্বীকৃত ও বেদ বাইবেল দ্বারাও নির্দেশিত।
৬। তার প্রবর্তিত ধর্মই যে একমাত্র সত্য ও গ্রহণযোগ্য ধর্ম হিসাবে মাননীয়, যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান বিশে^র প্রায় ৫১ টি রাষ্ট্রের অধিবাসীদের মাঝে তা তাদের ধর্ম হিসাবে স্বীকৃত ও পালনীয় অবস্থায় রয়েছে এছাড়াও বিশ্বের এমন কোন রাষ্ট্র নেই যেখানে এই ধর্ম অনুপস্থিত কিন্তু বাতিলকৃত ধর্মগুলো শুধু একটি মাত্র রাষ্ট্র বা এলাকায় কোন-ঠাসা অবস্থায় বিদ্যমান।
৭। তার উপর অবতীর্ণ ধর্মই যে একমাত্র বিশ্ববাসী মানুষের জন্য পালনীয় ও গ্রহণীয় হিসাবে নির্দেশিত সে সম্পর্কে তার প্রতি আল কোরআনের শেষ অবতীর্ণ বাণী দ্বারা একলক্ষ মানুষের সামনে একক স্রষ্টার পক্ষ থেকে যে বাণী নির্দেশিত হয়েছিল তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
“আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বিনাকুম ওয়া আতমামতু আলাইকুম নি'মাতি ওযারাদিতু লাকুমুল ইসলামা দ্বিনান” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৩) অর্থ- হে মানুষ আজ সেই দিন যেদিন তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করলাম আর ধর্ম হিসেবে একমাত্র ইসলামকেই বিশ্ববাসী মানুষের জন্য মনোনিত ও স্বীকৃতি দান করলাম।
এখানে উল্লেখ্য যে, নেয়ামত বলতে কোরআনকেই বুঝানো হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, যিনি এ বাণী অবতীর্ণ করলেন তিনি আর কেউ নন (কোন নবী, দেবতা, অবতার) স্বয়ং একক আল্লাহ। যিনি সমগ্র সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা সেই মনোনিত একক ইসলাম ধর্মকে যাতে কোন মানুষ অস্বীকার করতে না পারে সেজন্য তিনি তার মহান বাণীতে অন্যত্র ঘোষণা করেন- “ইন্নাদ্দিনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম” অর্থাৎ আল্লাহর (একক স্রষ্টা) নিকট একমাত্র ইসলামই (সকল মানুষের জন্য) মনোনিত ধর্ম।
আরো পড়ুন : নারী সৃষ্টি রহস্য, পুরুষ বা স্বামীর মর্যাদা নারী হতে বেশি হবার কারণ কি?
পাছে বিশ্ববাসী মানুষ অন্য কোন ধর্ম পালন করে শেষ বিচারের দিনে তার কাছে উপনিত হয় এ করণে তিনি আবারও শেষ বারের মতো মানুষকে সাবধান করে দিয়ে বললেন- “ওয়া মাইয়াব তাগে গাইরাল ইসলাম দ্বিনান কাল-ই ইউক বালা মিনহু” যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতিত অন্য কোন ধর্মসহ আমার সমিপে হাজির হবে তবে কষ্মিনকালেও তার সে ধর্মকে গ্রহণ করা হবে না।
শেষ কথা
উপরোক্ত তথ্যবলীর আলোকে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর প্রতি আমি একটি আবেদন পেশ করতে ইচ্ছা করছি আর তা হলো নিছক একটি পরিত্যাক্ত ধর্মের মোহে মুগ্ধ থেকে আর সেই ধর্ম মোতাবেক এবাদত উপাসনা করলেই যে পরিশেষে মুক্তি পাওয়া যাবে এমত ধারণাসমূহ বিপদের সংকেত ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ সিলেবাস বহির্ভূত পরীক্ষা দানের যখন কোন মুল্যায়ন নেই সেখানে পরিত্যাক্ত ধর্মের উপাসনা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? বিধায়, মনের সকল সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে একটি মাত্র সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তা হচ্ছে একজন সর্বময় ক্ষমতার স্রষ্টা অবশ্যই আছে। আর তারই নির্দেশিত ধর্মমতই সকল মানুষের জন্য পালনীয়।
উপসংহার: তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব : মানব জীবনে ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কিত তথ্যাবলী
প্রিয় পাঠক, লিখিত পোস্টটি কবি সুধী মোজাম্মেল হকে এর ‘মানব জীবনের আয়না’ ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মানীয় কবি সাহেবের “মানব জীবনের আয়না” ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধটি ধারাবাহিকভাবে এই সাইটের সাহিত্য মেনুতে প্রকাশ করা হয়। আপনি এমন তথ্যবহুল আর রহস্যজনক আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাহিত্য পাতা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url