হালাল খাদ্য ও জিকির আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে কতটা জরুরী
তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি নিয়ে আমাদের জানতে ইচ্ছে করে। তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি ইসলামে একটি গুরুত্বপুর্ণ, পবিত্র আধ্যত্বিক বিষয়। আমাদের দেশের কিছু বিভ্রান্ত ও অর্থলোভী লোকজন এর নামে বিভিন্ন ভুল বা মিথ্যা প্রচারণা করে এটাকে কলুষিত করেছে। এই পোস্টে হালাল খাদ্য ও জিকির আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে কতটা জরুরী সম্পর্কিত সামান্য কিছু আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি পুরো পড়ে নিন আর হালাল খাদ্য ও আল্লাহর জিকির অমর হওয়ার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে ধারনা পাবেন।
পোস্ট সুচিপত্রহালাল খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা
হালাল খাদ্য দ্বারা অমরত্ব লাভের দুটি গুন অর্জিত হয় একটি দৈহিক অপরটি আত্মিক। তাই হালাল খাদ্য গ্রহণ দৈহিক ও আত্মিক অমরত্ব লাভের প্রধান অংশ। কারণ হালালের সাথে পবিত্র গুন বিদ্যমান। যে ব্যক্তি হালাল ভক্ষণে অভ্যস্থ তার মাঝে ক্রমান্বয়ে পবিত্রতা গুনের সৃষ্টি হয় আর এ কথা চিরন্তনভাবে সত্য যে, পবিত্র না হলে কেউ পরম পবিত্র সত্বার সাথে মিলিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয় না। কারণ বৈদ্যুতিক বাল্বে সমস্ত ধরনের গুন ছাড়া যেমন বিদ্যুৎ ধারন করে আলোকিত হতে পারে না বা আলো দানে সক্ষম হয় না তেমনি হালাল খাদ্যের দ্বারা পবিত্রতা অর্জন ব্যতিত সেও সবগুনে গুনান্বিত বাল্বের মত আল্লাহর জ্যোতি বা জালালী নুরের আলো গ্রহণ করে পবিত্র হতে পারে না। এ ছাড়া উন্নত পরিভ্রমনের যোগ্যতাও আর্জন করতে পারে না। তাই অমরত্ব লাভের জন্য হালাল খাদ্য গ্রহণ করা জরুরী।
জিকির এর প্রয়োজনীয়তা
জিকির হলো অমরত্ব লাভের প্রধান অংশ। জিকিরের নুর দ্বারা অপদার্থ দেহকে পুড়িয়ে নিয়ে নিখাঁদ স্বর্ণের মত ক্লেদহীন মহামূল্যবান করে নিতে হয়। যার ফলে তা পচনশীলতা থেকে রক্ষা পেয়ে অমরত্ব লাভ করে থাকে।কারণ জিকিরের দ্বারা আস্তে আস্তে আত্মার স্থুলতা গুণ বিলোপ হয়ে শুক্ষতা গুণ প্রাপ্ত হয়ে থাকে। যেমন কোরাসিন, পেট্রোল, ডিজেল, একই জাতীয় পদার্থ হওয়া সত্বেও তা রিফাইন করে গ্যাসের মত আরো হালকা অবস্থায় আনায়ন করা হয়। আর এজন্য রিফাইন তেলে স্থুল কেরোসিন মিশ্রিত করলে যেমন ইঞ্জিন অচল হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন : তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : দেহ অমর হওয়ার উপায়
তেমনি অশোধিত আত্মার দ্বারা আল্লাহর নামের জিকিরে তাছির শুক্ষতা গুণ অর্জন করে উন্নত গতি তথা উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হওয়া যায়না। আর গতিশীলতার যোগ্যতা অর্জন ব্যতীত সেই ইল্লিন বা সর্বোচ্চ সোপানের আরহণের মর্যদায়ও পৌঁছাতে সক্ষম হবে না আর এজন্যই জিকিরহীন শুধু শরীয়ত পালন কারীর আত্মার অবস্থান ও জিকিরকারী আত্মার অবস্থান ইল্লিন বা উর্ধজগতে একই মর্যাদায় সমাসীন হতে পারবেনা। আর বাতিলকৃত ধর্মের অনুসারীদের আত্মা উপরোক্ত একটি বিষয়ের ও আওতাভুক্ত নয়। যে জন্য তাদের আত্মা স্থুল তথা পচনশীলতা গুণের অধীণে তথাকৃত আত্মার মৃত্যুর একমাত্র কারণ হলো আল্লাহর তৌহিদে বা তার একক স্বত্বায় বিশ্বাস স্থাপন করা। আর এজন্যই সেই সব স্থুল আত্মা প্রলয় দিবস পর্যন্ত সিজ্জিন নামক কারাগারে অবস্থান করে। তারা আল্লাহর অতুলনীয় অজাবে লিপ্ত থেকে কিয়ামত দিবসে কঠিন হিসাবের মুখোমুখি হবে। একক স্রষ্টার উপাসনা না করার অপরাধে অকৃতজ্ঞের পরিনাম স্বরুপ দোজখে নিক্ষিপ্ত হতে বাধ্য হবে।
জিকির দ্বারা কবরে দেহ পচন রোধ
নবী, হক্কানী আলেম ও আওলিয়ায়েকেরামদের দেহ কবরে না পঁচার কারণ হচ্ছে জিকির দ্বারা তাদের দেহ আলোকিত থাকে, যেমন জ¦লন্ত বাল্ব ও প্রজ্জলিত প্রদীপ অগ্নি সংযোগ অব্যাহত থাকলে তারা জীবিত, নির্বাপিত হলে তা মৃত। এমনি ভাবে জাকেরীণ আত্মাসমূহ জিকিরের অভ্যাস অব্যাহত রাখায় তাদের দশ লতিফা ও সমগ্র দেহের মাঝে সত্তর হাজার লোমকূপ হতে সুলতানুল আজকার জিকিরজারী রাখার অভ্যাসগত কারণে তাদের লতিফার সংযোগ নুর আরশে পাক হতে আলমে আমর পর্যন্ত সংযোজিত ছিল। এমনাকি তাদের রেহালতের পরেও তা অক্ষুন্ন থেকে যায়। অর্থাৎ এই সব জাকেরীণ গুণ সম্পন্ন বান্দারা অন্যান্য সাধারণ মানুষের মত মরেনা।
আরো পড়ুন : তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি: মহান আল্লাহ তায়ালার গুনাবলী ও বিশালত্ব
শহীদগণও এই পর্যায়ের শ্রেণীভুক্ত যেমন শহীদদের প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন “বাল আহইয়াউ”(সুরা বাকারা)। এই আয়াত তাদের প্রকৃত মৃত্যু না হবার ইঙ্গিত প্রদান করছেন। তাদের জিকিরের বাল্ব নির্বাপিত না হওয়া ও তারা প্রকৃত অর্থে না মরার কারণে তাদের দেহ কবরে অক্ষত থাকতে বাধ্য হয়।
জিকির সংক্রান্ত একটি উপমা
উপমা স্বরুপ বলা যায় হযরত বড়পীর সাহেব একদা তার পীর হযরত হাম্মাদ (রা) এর মাজার জিয়ারত করতে গিয়ে মোরাকাবার মাধ্যমে দেখতে পান যে, তাঁর পীরের শরীরে বেহেস্তী পোষাক শোভা পাচ্ছে (জরীর পোষাক)। তিনি প্রশ্ন করলেন হুজুর জরীর পোষাক তো জায়েজ নেই অথচ আপনার শরীরে তা বিরাজ করছে কেন?
আরো পড়ুন : তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব: সকল ধর্মের উৎস কোথায়?
তিনি বললেন বাবা পৃথিবীতে আমার দেহে সুলতানুল আজকার জিকির জারী ছিল যার কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খুশী হয়ে আমার দেহকে জরীর পোষাক দ্বারা আবৃত করে রেখেছেন এবং আমি বহাল তবীয়াতে অবস্থান করছি।
প্রিয় পাঠক, এতে করে অনুমান করতে পারলেন যে জিকিরকারীর দেহ অক্ষয় ও অমর ইস্রাফিল (আঃ) এর সিঙ্গার ফুৎকার ব্যতিত তা কাস্মিন কালেও বিলীন হবার সম্ভবনা নেই। (আল্লাহু আলামু)
উপসংহার: হালাল খাদ্য ও জিকির আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে কতটা জরুরী
প্রিয় পাঠক, লিখিত হালাল খাদ্য ও জিকির আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে কতটা জরুরী বিষয়ক পোস্টটি কবি সুধী মোজাম্মেল হকে এর ‘মানব জীবনের আয়না’ ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মানীয় কবি সাহেবের “মানব জীবনের আয়না” ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধটি ধারাবাহিকভাবে এই সাইটের সাহিত্য মেনুতে প্রকাশ করা হয়। আপনি এমন তথ্যবহুল আর রহস্যজনক আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাহিত্য পাতা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url