তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : দেহ অমর হওয়ার উপায়

তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি নিয়ে আমাদের জানতে ইচ্ছে করে। তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি ইসলামে একটি গুরুত্বপুর্ণ, পবিত্র আধ্যত্বিক বিষয়। আমাদের দেশের কিছু বিভ্রান্ত ও অর্থলোভী লোকজন এর নামে বিভিন্ন ভুল বা মিথ্যা প্রচারণা করে এটাকে কলুষিত করেছে। এই পোস্টে তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি: দেহ অমর হওয়ার উপায় সম্পর্কিত সামান্য কিছু আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি পুরো পড়ে নিন কিছুটা হলেও তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি এবং দেহ অমর হওয়ার উপায় সম্পর্কে ধারনা পাবেন।

তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : দেহ অমর হওয়ার উপায়
পোস্ট সুচিপত্র

তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : সূচনা

বিশ্ববাসী সকল মানুষের জন্য সর্বশেষ গ্রহণযোগ্য উন্নত, আধুনিক একমাত্র ধর্ম হলো ইসলাম। এই ধর্মের অনুসারীদের জন্যে আল্লাহই সব। তিনি ব্যতীত কোন আশ্রয় নেই তথা কোন সাহায্যকারীও নেই। কাজেই তিনি একমাত্র কার্য্যনির্বাহক। কেউ যদি তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে কার্য্যনির্বাহক মনে করে তবে সে নির্ঘাত প্রতারিত, তার সকল কাজেই হবে ভ্রান্তিতে পর্য্যবসিত।

দেহ অমর হওয়ার উপায়

যদি কেউ অমরত্ব লাভ করতে চায় তবুও তা একমাত্র তারাই মাধ্যমে সম্ভব। কেউ শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে অমরত্ব লাভ করতে চাইলে একমাত্র তারই মাঝে মিশে গিয়ে স্বীয় অস্থিত্ব বিলিন করে দিয়ে তবেই তার পক্ষে তা করা সম্ভব হতে পারে। অন্যান্য ধর্মের মাধ্যমে অমরত্ব প্রাপ্তির আশা করা একে বারেই অসম্ভব হতে পারে। অমরত্ব লাভ করার প্রক্রিয়া নিম্নরুপ। যথা- ক) রোজা বা অল্পাহার খ) আল্লাহর নামে জিকির গ) হালাল বা বৈধ খাদ্য গ্রহণ।

আরো পড়ুন : তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব : মহান আল্লাহ তায়ালার গুনাবলী ও বিশালত্ব


তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : দেহ অমর হওয়ার উপায়


 দেহ অমর হওয়ার উপায় সম্পর্কিত একটি উদাহরন

সকলেই জানেন প্রদীপের আলোর চেয়ে কুদরতি নুর অধিক শক্তিশালী, এবার আসুন নিম্ন উপমাটি দ্বারা কথার সত্যতা প্রমান করি।

কারো হাতে যদি একটি পোড়া ইট ও একটি অপোড়া(কাঁচা) ইট প্রদান করে বলা হয় যে ইট দুটো মাটিতে পুতে রেখে আসো। এবং একমাস পর যদি তাকে বলা যায় যে,প্রোথিত ইট দুটো তুলে নিয়ে এসো সেই ব্যক্তি কিন্তু পোড়া ইটটি অনায়াসে তুলে নিয়ে আসতে পারবে কিন্তু কাঁচা ইটটির অস্তিত্ব খুঁজে পেতে পারেনা। কারণ সেটি অন্য মাটির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। 

এর কারণ হলো আগেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহর কুদরতী নুর সকল অগ্নি বা আলো থেকে অধিক তথা অপরিমেয় শক্তিশালী। তাই সাধারণ আগুনের দ্বারা পোড়ানো ইট যদি হাজার বছর পরেও মাটি থেকে অক্ষত ভাবে আনা যায়। তাহলে আল্লাহর শক্তিশালী জালালী নামের জিকির দ্বারা মানব দেহের ১০টি লতিকাসহ ৭০ হাজার লোমকুপের প্রতিটি লতিকা হতে আল্লাহর নামের শক্তিশালী জালালী নামের জিকিরে যে দেহকে পোড়ানো হয়েছে সেই দেহকে কি ভাবে মাটি বা গ্রাস বা বিনষ্ঠ করতে পারে। 

আরো পড়ুন : তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব: সকল ধর্মের উৎস কোথায়?

আর এজন্যই দেখা যায় মাটি বা রাস্তা খুড়তে গিয়ে বহুকালের অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। তাদের দেহের সামান্যতম অংশও মাটির মলিনত্ব স্পর্শ করতে পারেনি। এমনতর নজির  বা ইতিহাস তো শত শত পৃথিবীতে বিদ্যমান রয়েছে। হাদিসে আছে যে, ১০ প্রকার লোকের দেহ কবরে পচে না বা বিনষ্ট হয় না। সেই প্রলয়ের দিন ইস্রাফিল (আঃ) এর সিংগার ফুৎকার ব্যতীত। তাহলে অনুধাবন করতে পারলেন যে, আল্লাহর জিকির ব্যতীত দৈহিক অমরত্ব লাভ করা কখনই কারও পক্ষে সম্ভব হবে না। 

তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : দেহ অমর হওয়ার উপায়


তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি না থাকায় আমাদের দেহ পঁচে যায় মাটিতে

এবার অপোড়া(কাঁচা) ইটের বিপর্য্যয়ের ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো-

অপোড়া ইট পার্থিব পঁচনশীলতার গুণ থেকে মুক্ত ছিলো না। পৃথিবী পঁচনশীল বা ধ্বংসশীল, এই পঁচনশীল মাটি দ্বারাই প্রতিটি মানবদেহ তৈরী করা হয়েছে। তাই এই অপোড়া দেহের মধ্যে পঁচনশীল গুন বিদ্যমান হেতু তা অমরত্ব লাভ করতে পারে নাই। কারণ এ প্রসঙ্গে একক স্রষ্টার পক্ষ থেকে মহা সত্যবাণী আল কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে আর তা হচ্ছে- 

‘কুল্লুমান আলাইহা ফান; ওয়া ইয়াব্‘ক্ব ওয়াজহু রাব্বিকা জুলজালালে ওয়াল ইকরাম’ (সুরা আর রহমান, আয়াত-২৬ ও ২৭) 

অর্থাৎ পৃথিবীসহ পৃথিবীস্থ যা কিছু রয়েছে সবকিছুই ধ্বংসশীল; একমাত্র তোমার পরম প্রতাপান্বিত মহাসম্মানী আল্লাহর অস্তিত্ব ব্যতীত।

তাই দেখা যাচ্ছে যে, সামান্য পার্থিব অগ্নির দহনত্ব গ্রহণ না করার কারণে অপোড়া ইটটি অমরত্ব লাভ করতে পারে নি। পরিনামে তা অন্যান্য রসময় পঁচন প্রবন মাটির সাথে মিশে যেতে বাধ্য হয়েছে। এমনিভাবে এ পঁচনশীল মাটি দ্বারাই মানুষ সৃষ্টি। তাই অন্যান্য জাতীর লোক বা ইসলামের শুধু শরিয়ত পালনকারী যারা আল্লাহর পবিত্র ও অবিনশ্বর শক্তিশালী তথা অমর নামের জিকির করে না, তারা পরিনামে অমরত্ব লাভের গুনে গুনান্বিত হতে পারে না। 

আরো পড়ুন : নারীরা এতো অবাধ্য কেন? আসল রহস্য জেনে নিন

দেহ অমর হওয়ার উপায় : অল্প খাদ্যগ্রহণ

অমরত্ব লাভ করার যে তিনটি গুনের উল্লেখ করা হয়েছে তার বিশেষত্ব হলো যেহেতু পার্থিব খাদ্য পঁচনশীল বা ধ্বংসশীল তাই অল্প খাবার গ্রহণ বা রোজার অভ্যাসের কারণে মানব দেহ থেকে অধিক খাদ্য গ্রহণে সৃজিত রসাধিক্যের পরিমান আস্তে আস্তে কমে গিয়ে দেহ হতে থাকে মার্জিত আধ্যাত্বিকতার সকল ক্ষেত্র। এই অবস্থায় যখন সে মহান স্রষ্টার জালালী নামের জিকিরে অভ্যাস্থ হয়ে পড়ে তখন স্বাভাবিকভাবেই দেহের সমস্ত লোমকুপ তথা রগ-রেশা থেকে আল্লাহ নামের জিকিরের প্রভাবে প্রতিনিয়ত তা পুড়তে পুড়তে পরিমানে পঁচনশীলতার প্রভাব গুণ থেকে রক্ষা পেয়ে দৈহিক অমরত্ব লাভ করে থাকে। যার ফলে তারা অপোড়া ইটের মতো মরার সাথে সাথে পঁচনত্বের স্বীকার হয়ে গলে পঁচে মাটির সাথে মিশে যেতে বাধ্য হয় না। 

উপসংহার : তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি, দেহ অমর হওয়ার উপায়

প্রিয় পাঠক, লিখিত তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : দেহ অমর হওয়ার উপায় বিষয়ক পোস্টটি কবি সুধী মোজাম্মেল হকে এর ‘মানব জীবনের আয়না’ ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মানীয় কবি সাহেবের “মানব জীবনের আয়না” ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধটি ধারাবাহিকভাবে  এই সাইটের সাহিত্য মেনুতে প্রকাশ করা হয়। আপনি এমন তথ্যবহুল আর রহস্যজনক আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাহিত্য পাতা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url