জন্মান্তরবাদ ও পুনর্জন্ম যুক্তিসহ ব্যাখ্যা
জন্মান্তরবাদ ও পুনর্জন্ম যুক্তিসহ ব্যাখ্যা : অনেক পৌরাণিক ধর্মাবলম্বী জন্মান্তরবাদে (Transcendentalism) বিশ্বাসী। অথচ জন্মান্তরবাদ প্রসঙ্গটা চিন্তা করলে সত্য বিকাশে চিন্তা ধারায় বাঁধার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে বিষটার কোন ক্রমেই মীমাংসা হতে চায় না। কারণ পৃথিবী ও পৃথিবীস্থ সকল পদার্থই ধ্বংশশীল অথচ জন্মান্তরবাদ চিন্তা করলে পৃথিবীস্থ কোন কিছুই ধ্বংসের সম্মুখীণ হতে হয় না। অথচ একক স্রষ্টার অস্তেত্ব ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংস হতে বাধ্য। আর প্রতিনিয়ত পৃথিবীস্থ সব কিছুকে ধ্বংশ হতে দেখ্ছি আমরা।
পোস্ট সূচিপত্রজন্মান্তরবাদ ও পুনর্জন্ম যুুক্তিসহ ব্যাখ্যা (Transcendentalism)
বিষয়টার সুত্রপাত ঘটেছে সম্ভবত মানব শিশুর জন্ম প্রসঙ্গ নিয়ে অনেকেই স্থুল জ্ঞানে বলে থাকেন কোন শিশু সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে আর কেউ জন্ম নিয়ে এক ফোটা দুধের অভাবে মৃত্যু বরণ করতে বাধ্য হয়। আর একটা প্রসঙ্গ হলো কোন জীবের প্রতি অত্যাচার প্রসুত সেবা গ্রহণ করা হলো, পরিনামে যে অত্যাচার করলো সে পরের জন্মে জীব হয়ে জন্মাবে আর অত্যাচারিত জীবটি মানুষ হয়ে জন্মাবে।
আরো পড়ুন : তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব : ইসলাম একটি স্বাভাবিক ধর্ম
যাহোক যেসব পৌরাণিক ধর্মাবলম্বী স্থুল ও শুধু পার্থিব জ্ঞানের অধিকারী আধ্যাত্বিক ও সুক্ষ জ্ঞান যেসব ধর্মাবলম্বীদের অনুভুতিতে নেই, যারা স্বীয় সাধনা দ্বারা অদৃশ্য জগতের কোন কিছুই অনুভব বা অনুধাবণ করার ক্ষমতা রাখে না তাদেরই স্থুল জ্ঞানে ঐসব প্রশ্নের উদ্ভব হওয়া সম্ভব।
বিষয়টা হচ্ছে সম্পূর্ণ তকদীরবাদী আর তকদীর বা ভাগ্যবাদ সম্পর্কে চিন্তা করতে আমাদেরকে বারণ করা হয়েছে। কারণ যেহেতু মানব জ্ঞাণ অত্যান্ত সীমিত স্তরের। তাই ঐ সব ভাগ্যবাদী জ্ঞানের অনুশীলন করে সদোত্তর খুজে না পেলে পথ ভ্রষ্ঠ বা বিকৃত মস্তিস্ক হবার সম্ভাবনা আছে।
সবর ও শোকর
আমাদেরকে এ প্রসঙ্গে দুটি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, বিষয় দুটির নাম যথাক্রমে সবর ও শোকর।
যারা জন্মগ্রহণ করে নিজেকে কষ্টে নিমজ্জিত অবস্থায় দেখতে পায়, তাদেরকে ছবর বা ধৈর্য্যাবলম্বন করতে হবে। আর এই ছবরের পরিনামের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই, ধৈর্য্যাবলম্বীদেরকে এমন ধরনের চির শান্তির স্বর্গোদ্যানে প্রবেশ করানো হবে, যেখান থেকে তাদেরকে কোন দিনও আর বের করা হবে না।
আরো পড়ুন : তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : দেহ অমর হওয়ার উপায়
আর যারা জন্ম গ্রহণ করেই নিজেকে অনাবিল শান্তির মাঝে দেখতে পায় তারা যতটুকু না হলেই নয় এমন পরিনাম আহার্য্য ও অন্যান্য জীবন ধারনোপোযোগী পার্থিব ভোগ্য বস্তু গ্রহণ করবে আর স্রষ্টাকর্তৃক এই অনুগ্রহ প্রাপ্তির শোকর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। প্রকাশ থাকে যে, জীবনে ভোগ্যবস্তু সহজলভ্য হলে আর সেগুলো যাচ্ছেতাই ভোগে নিমজ্জিত হয়ে পড়লে কঠিন ভয়াবহ পরিনাম ভোগ করতে হবে। এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বিষয়ে স্বয়ং একক স্রষ্টা স্বীয় বাণীতে ঘোষণা করেছেন
“যারা পার্থিব নিয়ামত বা উপকরণ লাভ করে নেয়ামত দাতার অনুকম্পা স্বরণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এমতবস্থায় (কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কারনে) উক্ত নেয়ামতকে তার জন্য আরো বাড়িয়ে দেওয়া হবে, আর যারা নেয়ামত ভোগের পরেও একক দাতার অনুকম্পা স্বীকার করবে না। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ০৭)
যা হোক সামান্য পঞ্চাশ একশো বছরের পার্থিব জীবনের সুখ ও দুঃখ ভোগের প্রতি ছবর ও শোকরের কারণে যদি অনবদ্য চির সুখময় অনড় স্বর্গলোকের অধিবাসী রুপে পরিগণিত হওয়া যায় তবে তা না করে স্রষ্টার এখতিয়ার মূলক মহান কর্তৃত্বকে সমালোচনা তথা দোষারোপ করে যদি বলা যায়, কেন তাকে সুখ প্রদান করা হলো, কেন আমাকে দুঃখ ভোগানো হলো ইত্যাদি কাজে অভিযোগ তুলে মহান স্রষ্টার কৌশলী লীলাকে ত্রুটিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। আর জন্মান্তরবাদের সেই চুরাশি কোটিবার জন্মের অবতারনা করে এই ধ্বংশশীল পৃথিবীকে ধ্বংশহীনতায় আনায়ন করে এবং পার্থিবকৃত পাপ-পুণ্যের পরিনামের হাত থেকে নিস্কৃিত লাভের কামনায় যোনী ভ্রমণের মাধ্যমে একক স্রষ্টার বিচার কার্য্য হতে নিরাপত্তার আশা করে যারা নিশ্চিন্ত সময় বিপন্ন করছে তবে তা হবে একপ্রকার মনগড়া অলীক স্বপ্নের নামান্তর।
একটা মানুষ জন্ম গ্রহণ করার পঞ্চাশ হাজার বছর পুর্বেই তার পার্থিব জীবনের বিষয়টি একক স্রষ্টা সুরক্ষিত ফলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন। কে সুখে জন্ম গ্রহণ করবে আর কে দুঃখে জন্মগ্রহণ করবে, এসব হচ্ছে সৃষ্টিগত একটা বিশাল ব্যাপার। আর এটা সম্পূর্ণ একক স্রষ্টার ইচ্ছাধীন। আমি যদি আমার স্রষ্টাকে ভালইবাসতাম, তাহলে তার সকল নির্বাচন নির্ধারনকে অবশ্যই নিদ্বিধায় মেনে নেবার চেষ্টা করতাম তবেই আমি কৃতজ্ঞ মানুষ হিসাবে তার অনুকম্পা লাভের উপযুক্ত হয়ে তার সুবিবেচনার পাত্র বলে গণ্য হতাম। পরিণামে তা না করে কার্য্যক্রমকে যদি সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখি, তবে আমি হব নির্ঘাৎ একটা বেয়াদব, তথা তার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত এক বিদ্রোহী ব্যক্তি। আর বিদ্রোহীর জন্য নিকৃষ্ট সমাজ অবধারিত এতে কোন সন্দেহ নেই।
উপমাস্বরুপ বলা যায়, যেকোন কারণেই হোক, কোন দয়াবান পিতা যদি দুই সন্তানের জন্যে বিশেষ পর্ব উপলক্ষে পোষাক পাতি ক্রয় করে আনে, তার মধ্যে এক ছেলের কাপড় খুব মূল্যবান, আরেক ছেলের কাপড় নেহাৎ কম মুল্যের। এখানে উভয় ছেলেরই পিতার অনুকম্পা লাভের উপায় আছে। আর যদি উভয় ছেলে পিতৃভক্ত হয়, তাহলে পিতাকেও আর সমস্যায় বা সমালোচনার পাত্র হতে হয় না। যেমন যে ছেলেকে মূল্যবান পোষাক দেওয়া হয়েছে সে যদি পিতার সমক্ষে এগিয়ে এসে হৃষ্ট চিত্তে বলে পিতা আমার জন্যে যে মূল্যবান পোষাক এনেছেন এজন্য আপনার বিবেচনার প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত, সত্যি-ই আপনি সুমহান। পাঠক এটার নামই শোকর।
আর যে ছেলের জন্যে কম মূল্যের পোষাক খরিদ করা হয়েছে, সে যদি বলে- পিতা আপনার মর্জি বা ক্ষমতা মোতাবেক আপনি আমার জন্যে যে পোষাক খরিদ করে এনেছেন তা আমি হৃষ্ট চিত্তে গ্রহণ করেছি এই ভেবে যে, আপনি হয়তো সময়মত আমার জন্যেও ভাল পোষক খরিদ করে আনবেন, এটার নাম সবর।
আরো পড়ুন : তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব : সকল ধর্মের উৎস কোথায়
অবশ্যই শোকরের চেয়ে ছবরের মূল্য অনেক বেশী আর এ জন্যেই ধৈর্য্যশীলদের পারলৌকিক পরিনাম খুবই উচ্চ পর্যায়ের এবং একক স্রষ্টাও তাদের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে।
জন্মান্তরবাদের চুরাশি কোটি যোনি ভ্রমন
যাহোক, জন্মান্তরবাদের চুরাশি কোটি যোনি ভ্রমনের প্রসঙ্গে বলা হয় যে, চুরাশি কোটি যদি জোড়া শব্দ হয় তবে যার জন্ম পাপে হয়, চুরাশী কোটিবার জন্মের পর তার সমাপ্তি পুণ্যে রুপান্তরিত হবে। আর যার জন্ম পুণ্যে হয়, চুরাশী কোটি বার জন্মের পর তার সমাপ্তি পাপে রুপান্তিরত হবে। আর এ তথ্য আমি সহজ হিসাব দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করেছি।
এছাড়াও স্থুল জ্ঞানের অধিকারীগণ সুখে জন্মগ্রহণ পূণ্য মনে করেছেন, আর দুঃখে জন্ম গ্রহণকারীগণকে পাপী মনে করেছেন। এই ধারনার মধ্যে নাস্তিকতার গন্ধ অনুভব করা যায়। কারণ তাদের ধারনায় যদি সুখকে পূণ্য ও দুঃখকে পাপ মনে করা হয়, তবে পৃথিবীই স্বর্গ, পৃথিবীই নরক পরকালীন স্বর্গ নরক বলতে কিছুই নেই।
সুখ বা দুঃখকে পাপ বা পূণ্য বিবেচনা করার মতো বোকামী আর কিছুই নেই, কারন সুখ হচ্ছে স্রষ্টার নৈকট্য থেকে দুরে নিক্ষেপকারী একটি পরিস্থিতি আর দুঃখ হচ্ছে স্রষ্টার নিকটবর্তী হবার মতো একটি মহান পরিবেশ।
জন্মান্তরবাদ (Transcendentalism) একটি ভ্রান্ত ধারনা
যাহোক, মানুষের কর্মের শেষ পরিনতির দ্বারা পাপ বা পূণ্য সুচীত হচ্ছে। অতএব, বিচারের প্রয়োজন। এবার এ প্রসঙ্গে দু-একটি সূত্রের উল্লেখ করছি।
(ক) চুরাশি কোটি যোনি ভ্রমণ শেষেও পাপ বা পূণ্যের পরিনতি আসছে। অতএব বিচারের প্রয়োজন।
(খ) বিচারের যেহেতু প্রয়োজন দেখা যাচ্ছে, তাহলে পৃথিবীস্থ সবকিছুর প্রলয় আবশ্যক, কারণ যেহেতু স্রষ্টা ব্যতিত সবকিছুই ধ্বংসশীল।
আরো পড়ুন : মানব জীবনে ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কিত তথ্যাবলী
(গ) প্রতিটি আত্মাকে একই সঙ্গে সৃষ্টি করতঃ পর্যায়ক্রমে তার ভাগ্যলিপি মোতাবেক পৃথিবীতে প্রেরণ করা হচ্ছে এই লক্ষ্যে যে, কে তার স্রষ্টাকে ভালোবাসবে আর তার প্রদত্ত নীতি মোতাবেক স্বীয় জীবন পরিচালিত করবে, অথবা করবে না। শেষ বিচার এ কারণেই সংঘটিত হওয়া জরুরী।
(ঘ) চুরাশী কোটি যোনি ভ্রমণের নিমিত্তে এই ধ্বংশশীল পৃথিবী যদি ধ্বংস না-ই হয় তবে পাপ পূণ্যের হিসাব নেই, আর পাপ পূণ্যের হিসাব না থাকলে স্বর্গ নরকের প্রয়োজন কি?
(ঙ) স্বর্গ নরকের সত্যতা পৌরানিক সকল নাকচকৃত ধর্মমতে ও চলতি একমাত্র গ্রহণযোগ্য (ইসলাম) ধর্মমতে এবং সকল ধর্মগ্রন্থ দ্বারা স্বীকৃত। তাই স্বর্গ নরক থাকলে পৃথিবীর ধ্বংসের প্রয়োজন আছে বা তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। অতএব জন্মান্তরবাদ নামক এই স্থুল মতবাদ যুক্তির মারপ্যাচে টিকে থাকছে না। অতএব প্রলয় ও শেষ বিচার অবশ্যই সংঘটিত হবে।
দৃস্টি আকর্ষণ : জন্মান্তরবাদ ও পুনর্জন্ম যুক্তিসহ ব্যাখ্যা
প্রিয় পাঠক, লিখিত জন্মান্তরবাদ ও পুনর্জন্ম যুক্তিসহ ব্যাখ্যা বিষয়ক পোস্টটি কবি সুধী মোজাম্মেল হকে এর ‘মানব জীবনের আয়না’ ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মানীয় কবি সাহেবের “মানব জীবনের আয়না” ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধটি ধারাবাহিকভাবে এই সাইটের সাহিত্য মেনুতে প্রকাশ করা হয়। আপনি এমন তথ্যবহুল আর রহস্যজনক আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাহিত্য পাতা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url