অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি জানতে পুরো পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। অনেক তথ্যবহুল করে লেখা এই পোস্টটি পড়ে আপনি অর্জুন গাছের পরিচিতি, অর্জুন গাছের প্রাপ্তিস্থান ও অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্থারিত জানতে পারবেন।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি
পোস্ট সূচিপত্র

বিভিন্ন ভাষায় অর্জুন গাছের নামসমুহ

  • বাংলায় : অর্জুন
  • আরবী : লেসানুন
  • ইংরেজি : Arjuna
  • বৈজ্ঞানিক নাম : Terminalia arjuna

অর্জুন গাছের পরিচয় ও অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি

অর্জুন মূলত বড় ডালপালাযুক্ত গাছ। এটি উচ্চতায় ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর কান্ড শাখা প্রশাখা বেশ মসৃন হয়ে থাকে। পাতার রং গাড়ো সবুজ হয়, সামান্য লম্বা ধরনের, সামনের দিকটা কিছুটা গোলাকার, দেখতে অনেকটা মানুষের জিহ্বার মতন হয়ে থাকে। ডালপালা আর গাছের ছালের রং হালকা গোলাপি আভাযুক্ত হয়। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছালের রং সাদা হয়ে যায় এবং উপর থেকে পাতলা ছাল উঠে যায়। শীতের শুরুতে গাছে ফল ধরে।

আরো পড়ুন : হাত পা কেটে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কার্যকরী টোটকা

অর্জুন গাছের জন্মস্থান ও অর্জুন গাছের প্রাপ্তিস্থান

বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই অর্জুন গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া ভারত, বার্মা, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বহুলভাবে অর্জুন গাছ জন্মে থাকে। বেলে মাটি ও কাঁকরযুক্ত মাটি এই গাছের জন্য সবচাইতে ভাল। গাছটি দীর্ঘ দিন টিকিয়ে রাখতে শুকনো আবহাওয়া অধিক প্রয়োজন। এ পর্যন্ত গাছের জন্মস্থান ও প্রাপ্তি স্থান সম্পর্কে জানলেন এখন জানতে পারবেন অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি এই প্রশ্নে বলা যায় প্রাচীনকাল থেকে অর্জুন গাছ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় চিকিৎসকগণ বহুলভাবে ব্যবহার করে আসছেন। যেমন, হাঁপানি রোগে, হৃদরোগে, মেশতার দাগ দূর করতে, ফোড়া উঠলে বা ফোঁড়া গলাতে, হাড় ভেঙে গেলে বা মচকে গেলে, রক্তপিত্তের চিকিৎসায়, লো ব্লাড প্রেসার, যক্ষা রোগ, রক্ত আমাশয়সহ প্রসাব বন্ধ হয়ে যাওয়া রোগে অর্জুন গাছের ছালের উপকারীতা প্রচুর। এখানে উল্লেখ্য যে, অর্জুন গাছের ছাল যখন ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হবে তখন সেই ছাল পূর্ব দিক থেকে নেওয়া ভালো। কারণ সেদিকে ছাল সকালের রোধ পায় আর তাই সেগুলো বর্ণিত সকল রোগের চিকিৎসায় বেশি উপকার  পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন : রক্তচাপ বেড়ে গেলে নয়ন তারা গাছ হতে পারে আপনার জন্য মহাঔষধ

হৃদরোগ কমাতে অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অনেক সময় হাই-ব্লাড প্রেসার থাকলে রোগীর বুক ধরফর করে। হাই ব্লাড প্রেসার নেই এমন রোগীর বুক ধরফরানী রোগ থাকলে অর্জুনের ছাল দিয়ে প্রস্তুত এই ভেষজ ঔষধটি অভাবনীয় ভাবে কাজ করে। ওষুধটি যেভাবে বানাবেন তার বর্ণনা নিম্নরুপ-

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি


বুক ধরপর করলে হাফ লিটার গরুর দুধ সমপরিমাণ খাবার পানিতে ২০-২৫ গ্রাম অর্জনের ছাল মিশিয়ে হালকা আঁচে সিদ্ধ করে নিতে হবে। ছাল সিদ্ধ হয়ে পানি ও দুধ যখন প্রায় আড়াইশো মিলিলিটার থাকবে তখন পাত্র নামিয়ে সেটা প্রতিদিন বিকেলে খেলে মুখ ধরফরানী কমে যাবে আশা করা যায়।

মেছতার দাগ দূর করতে অর্জুন ছালের উপকারিতা

সাধারনত মেয়েদের বয়স হয়ে গেলো আস্তে আস্তে লিভার দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে মুখে কালো ছোপ পরে। এই কালো দাগকে মেছতা বলা হয়। অর্জুনের ছাল ভালোভাবে মিহি করে চূর্ণ করতে হবে তারপর সেই চূর্ণ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে গোসলের তিন ঘন্টা আগে মুখে লাগালে মেছতার দাগ উঠে যাবে। তবে ভাল ফলাফল পেতে এই অর্জুন গাছের ছালের চুর্ণ কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।

আরো পড়ুন : পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত গ্যাসের ঔষধ পেটে গ্যাস হলে প্রাকৃতিক সমাধান

রক্তপিত্তের সমস্যা বা রক্ত বমি হলে অর্জুন ছালের উপকারিতা

অনেকের মুখ দিয়ে বমির বেগের সাথে কালছে রক্ত পড়ে। এই সমস্যাটি প্রতিদিন না ঘটলেও মাঝে মাঝে রক্ত বমি হয়। এরকম হলে অর্জুন ছাল হতে পারে অব্যর্থ ঔষধ। রাতে ১০-১৫ গ্রাম তাজা অর্জুনের ছাল প্রায় ২০০ মিলিলিটার ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে সেই ছাল ভিজানো পানি পরিষ্কার পাতলা কাপড়ের ছেঁকে নিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

লো ব্লাড প্রেসারে অর্জুন ছালের উপকারিতা

লো-ব্লাড প্রেশারে অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। এক্ষেত্রে একটি পত্রে ৫০০ মিলিলিটার গরুর দুধে ১০-১৫ গ্রাম কাঁচা অর্জুন ছাল মিশিয়ে হালকা আঁচে ফুটাতে থাকুন। তারপর সেই মিশ্রনগুলো শুকিয়ে ২০০ মিলিলিটার পরিমাণ থাকতে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। এই মিশ্রন বা ভেষজ ঔষধটি সাতভাগ করে প্রতিদিন একবার করে ৭ দিন খেলে রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন : যে কারণে সকালে কাঁচা রসুন খাবেন

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি

যক্ষা রোগে অর্জুন ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালকে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে অত্যন্ত মিহি করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে তারপর পাতলা কাপড়ে চেলে নিয়ে বসাক পাতার রসের ভিজিয়ে আবার ভালভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। একই প্রকৃয়ায় পূণরায় ক্রমাগত বসাক পাতার রসে ভিজিয়ে মোট সাতবার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার ওই গুরোগুলো দুই-তিন গ্রাম পরিমাণ করে নিয়ে দুই চামচ মধু ও এক চামুচ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে সন্ধ্যায় খেলে রক্ষা রোগ ভালো হয়ে যাবে। যক্ষা রোগ নির্মুল করতে দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় আর তাই ধৈর্য ধরে সেই চিকিৎসা চালিয়ে গেলে, পূর্ণ আরগ্য লাভ করা যায়।

অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা

আসলে অর্জুন গাছের ছালের রস খেতে কিছুটা কষা স্বাদের। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের জন্য অর্জুন গাছের পাতা বা গাছের ছাল খাওয়ার ফলে পায়খানায আরোও বেশি কষে যেতে পারে। সেই সাথে রোগীর পেটে মল আটকে ক্রমেই বায়ুর চাপের বৃদ্ধি, অম্বল এবং হজমে অসুবিধা হতে পারে। তাই এ ধরনের রোগীর জন্য অর্জুন গাছের পাতা, ছাল বা এর রস না খাওয়াই ভালো।

আরো পড়ুন : ছয়টি ভেষজ গাছে ডায়বেটিস নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়

উপসংহার : অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি

অর্জুন গাছের ছাল খুবই উপকারী একটি ভেষজ ঔষধ। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে গাছ ও লতাপাতার চিকিৎসায় এটি প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে লো-ব্লাড প্রেসারে এটি খুবই ভালো কাজ করে।

প্রিয় পাঠক, উপরের পোস্টটি পড়ে নিশ্চয়ই অর্জুন গাছের পরিচয়, জন্মস্থান, প্রাপ্তিস্থান এবং এর ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি কি সম্পর্কিত পোস্টটি ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন অর্জুন গাছের ছাল সম্পর্কিত জানতে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url