আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম
আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আর জেনে নিন আযান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার সঠিক নিয়ম।
পোস্ট সূচিপত্রআজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পূর্বে আযান দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ ফজিলত রয়েছে। সকল মুসলিমের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে সালাতের পূর্বে আযান দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আমরা সবাই আজান দিতে পারি না, কেবল শুনি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আজানকে কেন্দ্র করে অগণিত পুরস্কার ও বরকত রেখেছেন। অপরদিকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে পূর্বে ইকামতও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আজান ও ইকামত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সালামের বিভিন্ন হাদিস রয়েছে এই পোস্টে আমরা আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামের সেই হাদিসগুলোর মাধ্যমে আজান ও ইকামতের সঠিক জবাব দেওয়ার নিয়ম অনুসন্ধান করবো।
আরো পড়ুন : জীবাত্মা ও মানবাত্মার পার্থক্য | আত্মার পরিচয়
আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম
আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সকলেই জানি। প্রতিনিয়ত পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেওয়ার জন্য মোয়াজ্জিনগণ পরকালে উচ্চ মর্যাদায় সম্মানিত হবেন।মোয়াজ্জিনগনের মর্যাদা সম্পর্কে অন্য আর একটি পোস্টে আলোচনা করা হবে।
আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকগুলো হাদিসে বলা হয়েছে মুয়াজ্জিন আযানের যা যা বলবে শ্রোতারাও অনুরুপ তাই বলবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা মোয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুনবে তখন সে যা বলে তোমরাও অনুরুপ বলবে। (সহিহ বুখারী)
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসে ছিলাম। তখন বিল্লাল রাঃ আজান দিলেন। আজান শেষে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-এই ব্যক্তি (মুয়াজ্জিন) যা বলেছে তার অনুরুপ যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসতাদরাক হাকিম- ১/৩২১)
আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত উপরের হাদিস থেকে বোঝা গেল যে, আযান দেওয়ার সময় মুয়াজ্জিন যা যা বলবেন উত্তরে শ্রোতাগণ অনুরুপ বলবে। কোন হাদিসে আজানের জবাব দেয়ার কোন ব্যতিক্রম পদ্ধতি বা নিয়ম বর্ণনা করা হয়নি।
আরো পড়ুন : ইসলামের বাস্তব কাহিনী খালিদ ও ইফরিদ জিন
তবে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম শুধু একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী শিক্ষা দিয়েছেন তা হলো মুয়াজ্জিন যখন “হাইয়া আলাস সলাহ” ও “হাইয়া আলাল ফালা” বলবে তখন শ্রোতাগণ “লা হাওলা ওয়ালা ক্বুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলবেন। এ হাদিসে তিনি আরো বলেন, কেউ যদি মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে আযানের বাক্যগুলোর অনুরুপ অন্তর থেকে বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ মুসলিম)
ফজরের আজানের জবাব ও দোয়া fajr azan jawab
ফজরের আজানের জবাব ও দোয়া সম্পর্কিত আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত রীতি হল ফজরের আযানের সময় যখন মোয়াজ্জিন “আসসালাতু খইরুম মিনান নাউন” বলেন তখন শ্রোতাগণ “সাদাকতা ওয়া বারিকতা” অর্থাৎ তুমি সত্য বলেছ, পুণ্য বলেছ, এটা বলেন। ফজরের আযানের জবাবের এই ব্যাপারটি পুরাপুরি সুন্নতের খেলাপ। ইবনে হাজার আসকালানী মোল্লা আলী কারী ও অন্যান্য মহাদ্দিসগণ বলেছেন যে ফজরের আজানের জবাব ও দোয়া এর ক্ষেত্রে এ বাক্যটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কোন সহিহ বা জয়িফ হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম অথবা তাঁর কোন সাহাবী থেকে ফজরের আজানের জবাব ও দোয়া (fajr azan jawab) টি বর্ণনা করা হয়নি। মূলত শাফীই মাযহাবের কোন কোন ফকিহগণ নিজের মত থেকে এ বাক্যটি বলার জন্য মনোনীত করেন, আর পরবর্তী যুগে সবাই তা গ্রহণ করেছেন।
আরো পড়ুন : গত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা আদায়ের নিয়ম
প্রিয় পাঠক, ফজরের আজানের জবাব ও দোয়া fajr azan jawab সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানলাম। সুন্নতের মধ্যে থেকে আমাদের প্রত্যেকটি ইবাদত করা নিরাপদ। সুন্নতের বাইরে গিয়ে কোন ইবাদত তৈরি করে করলে তা হবে প্রকৃত বেতআত ও নাজায়েজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের কবুল করুন আর আমাদেরকে সুন্নতের মধ্যে থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।
ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম বা ইকামতের জবাব কিভাবে দিতে হয়
এবার চলুন, ইকামতের জবাব কিভাবে দিতে হয়? ইকামত দেওয়ার সময় তার জবাব দেওয়া জরুরী কিনা এ ব্যাপারে কিছুটা আলোচনা করা যাক। তার আগে আর একটি বিষয় স্পস্ট করা দরকার সেটি হলো ইকামতের বাক্যগুলি কিভাবে বলতে হবে? আজানের মতো করে ইকামতের বাক্যগুলোও কি দুবার বলতে হবে নাকি একবার বলতে হবে। বিশ্বের অন্যন্য বহু মুসলিম রাষ্ট্রে ইকামতের বাক্যগুলো একবার করে বলার প্রচলন রয়েছে। আবার আমাদের দেশে সাধারনত আজানের মতোই ইকামতের বাক্যগুলো দুবার করে বলা হয়। চলুন এ ব্যাপরে কিছু আলোচনা করা যাক।
ইকামতের সঠিক নিয়ম : ইকামতের নিয়ম নিয়ে বিতর্ক
ইকামতের সঠিক নিয়ম বা ইকামতের নিয়ম নিয়ে বিতর্ক ব্যাপারে বলতে গেলে, আযানের মত প্রতিটি বাক্য দুবার করে নাকি শুধু একবার করে বলতে হবে এ ব্যাপারে আমাদের মুসলিমদের মাঝে মন কষা-কষি ও বিতর্ক দেখা যায়। অথচ উভয় বিষয়টিই সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। দুটি মতের একটিও মাযহাবের নিষিদ্ধ নয়। মুহাদ্দিসগণ ও মাযহাবের ইমামগণ এর সকল ক্ষেত্রে মূলত একটি হাদিস বেশি গ্রহণযোগ্য বলে গ্রহণ করেছেন। আর এ সম্পর্কে অন্য হাদিস নির্দেশিত আমলকে তারা হারাম ও নাজায়েজ বলেননি। বরং অনুত্তম বলে গণ্য করেছেন। একাধিক সহিহ হাদিসে বর্ণিত যে, আযানের বাক্যগুলো দুবার করে এবং ইকামতের বাক্যগুলো একবার করে বলতে হবে।
আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দেন যে, আজানের বাক্যগুলো জোড়ায় জোড়ায় এবং ইকামতের বাক্যগুলো বেজোড় বলবে। শুধু “ক্বদ কামাতিস সালাহ” বাদে। ইকামতের সঠিক নিয়ম হিসেবে এটিই বহুল প্রচলিত।
অপরদিকে ইকামতের শব্দগুলিকে আজানের মত জোড়ায় জোড়ায় বলার ব্যাপারে কয়েকটি সহিহ হাদিস রয়েছে। একটি হাদিসে তাবিই আব্দুর রহমান ইবনু আবী লাইলা বলেন, আযান ও ইকামতের বর্ণনায় আমাদেরকে সাহাবীগণ বলেছেন, তিনি জোড়া জোড়া বাক্যে আজান দেন এবং জোড়া জোড়া বাক্যে ইকামত দেন। শাইখ নাসির উদ্দিন আলবানী বলেন, হাদীসটির সনদ অত্যন্ত বিশুদ্ধ। এ অর্থে অন্যান্য হাদিসও হাসান হাদিস বলে আখ্যায়িত।
আরো পড়ুন : কতটুকু দূরত্বে গেলে কসরের নামাজ পড়তে হয়
ইকামতের নিয়ম নিয়ে বিতর্ক নিরশনে বা ইকামতের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলেমগণ বলেছেন, যে বিষয়গুলোতে উভয় মতের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হাদিস বিদ্যমান সেই বিষয়গুলোতে চার ইমাম ও সাহাবী-তাবীইগণের রীতি মোতাবেক প্রমান পেলে সেই উভয় আমলকেই বৈধ বলা যায়। তবে একটিকে অগ্রগণ্য করে নিজের মতো করে পক্ষে দলিল পেশ করে অন্য মতটিকে অবৈধ বলা যাবে না। এ ধরনের বিষয় নিয়ে তর্ক করা যাবে না। অপরপক্ষকে কুরআন-হাদিস নিষিদ্ধ হারাম কর্ম বলে হেয় করা যাবে না। এগুলো সব হারাম কর্ম। এরূপ হারাম কর্মকে দ্বীন মনে করা দ্বীনের নামে এরূপ কর্ম করা একটি কঠিন হারাম ও বিদআত বলে অবহিত। আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম পোস্টে এই ছিলো ইকামতের সঠিক নিয়ম বা ইকামতের নিয়ম নিয়ে বিতর্ক ব্যাপারে আলোচনা।
ইকামতের জবাব দেয়ার সঠিক নিয়ম
ইকামতের জবাব দেয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বলা যায়, মূলত ইকামতকেও হাদীসে আজান বলা হয়েছে। আর তাই ইকামত শুনলে আজানের মত জবাব দেওয়া কর্তব্য। মুয়াজ্জিন যা বলবে অনুরুপ বলতে হবে, শুধু ”হাইয়া আলাস সালাহ” ও “হাইয়া আলাল ফালাহ” এর সময় “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলতে হবে। এমনকি উপরে বর্ণিত হাদিসগুলোর আলোকে “ক্বদ কামাতিস সালাহ” এর সময় মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলতে হবে। একটি দুর্বল হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাম একবার মোয়াজ্জিনের “ক্বদ কামাতিস সালাহ” বলার সময় তিনি জবাবে বলেছিলেন ”আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহ” অর্থাৎ “আল্লাহ একে প্রতিষ্ঠিত করুক ও স্থায়ী করুক” বাকি সকল বাক্যের জবাব আযানের জবাব দেয়ার নিয়মে প্রদান করেন। বিভিন্ন ফকিহ ও আলেমগণের মতে ইকামতের জবাব দেয়ার সঠিক নিয়ম আসলে এটিই।
উপসংহার : আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত এই পোস্টটি পড়ে নিশ্চই আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম, ফজরের আজানের জবাব ও দোয়া fajr azan jawab, ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম বা ইকামতের জবাব কিভাবে দিতে হয় এবং ইকামতের সঠিক নিয়ম : ইকামতের নিয়ম নিয়ে বিতর্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করবেন, কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url