তুলনামুলক ধর্মতত্ত্ব: ইসলাম একটি স্বাভাবিক ধর্ম
ইসলাম একটি বিশ্বজনীন ধর্ম। বিশ্বের সকল মানুষ যাতে এই সত্য ও আদর্শ ধর্ম গ্রহণ করে ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি পেতে পারে সেই লক্ষ্যে সকল সৃষ্টির স্রষ্টা মহান প্রতিপালক আধুনিক বিশ্নের সকল মানুষের ধারণ উপযোগী করে সকল মুনির শ্রেষ্ঠমুনি, সকল মানবের শ্রেষ্ঠ মানব সকল প্রেরিত পুরুষের সর্বশেষ প্রেরিত পুরুষ ৬৩২ খৃষ্টাব্দে ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের দিন একলক্ষ মানুষের সামনে সর্বশেষ গ্রন্থের সর্বশেষ বাণী অবতীর্ণ করেন যার মর্মার্থ নিম্নে প্রদান করা হল।
পোস্ট সূচিপত্রতুলনামুলক ধর্মতত্ত্ব: ইসলাম একটি স্বাভাবিক ধর্ম
“হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আজ সেই দিন যেদিন আপনার ধর্মকে পরিপুর্ণ করে দিলাম এবং ধর্ম হিসাবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম” - সুরা মায়েদা, আয়াত ৩।
অতএব, দেখা যাচ্ছে ঐতিহাসিক সভ্যতার ভিত্তিতে ৬৩২ খ্রি. একক প্রভুর পক্ষ থেকে ইসলাম বিশ্ববাসী সকল মানুষের একমাত্র ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে গেল। এরপরও কি কোন শিক্ষিত মানুষের কোন সংশয় থাকার কথা? আচ্ছা আপনার বাড়ীর আশে পাশে যদি কোন একটা বিষ্ময়কর কান্ড ঘটে আর আপনি ও অন্যান্যরা তার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে থাকেন পরিনামে দুদিন বাদে যদি কেউ তা অস্বীকার করে বসে তবে তাকে কি কেউ সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তি হিসাবে মনে করতে পারে? ইসলামের অবির্ভাবের স্থান, কাল ও পাত্রের সমন্বয়ে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তা সত্বেও কোন জ্ঞানী লোক যদি সকল ইতিহাসকে স্বীকার করে নিয়ে শুধু ঐতিহাসিক ঘটনাকে অস্বীকার করে তবে তাকে তো কখনোই জ্ঞানী মানুষ বলে ধারনা করা যায় না।
আরো পড়ুন : দুনিয়ার মহব্বত সকল গুনাহের মূল
আচ্ছা কোন সুবোধ লোক যদি পথহারা হয়ে রাতে কোন যাদুকর ডাকাত বা খুনি লোকের বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে পরদিন যদি সে বিশ্বস্থ সুত্রে জানতে পারে যে এটা ক্ষতিকর লোকের বাড়ী এখানে অবস্থান করলে মৃত্যু সুনিশ্চিত তদুপরি সে যদি বলে যে, আশ্রয় যখন নিয়েই ফেলেছি তখন আর সরে পড়ব না। তবে তাকে কি কেউ বিবেকবান বলে মেনে নিতে পারে? ভাগ্যচক্রে সেই আদিম যুগের বা দাদাদের ধর্মে জন্মগ্রহণ করা হয়েছে বলে কি সত্য ও জ্ঞান আসার পর স্বীয় মানুষিকতার ও পুরাতন অনুন্নত বাতিলকৃত ধর্ম ও নীতিমালার পরিবর্তন করতে হবে না।
ইসলাম একটি স্বাভাবিক ধর্ম
যাহোক, কথায় বলে, মারলে রাজার ভান্ডার আর ধরলে বড় নায়ের কান্ডার। এমতাবস্থায়, আমি ভ্রান্তিপুর্ণ স্রষ্টাদের উপাসনা পরিহার করে যদি সকল স্রষ্টার স্রষ্টা একক প্রভুর নাম প্রতিনিয়ত জপন করতে থাকি তাহলে সেই সব ভ্রান্তিপুর্ণ স্রষ্টার শক্তি আপনার কি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে? কারণ আপনি তো সবচেয়ে বড় নায়েরই আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। ছোট নাও গুলো রুষ্ঠ হয়ে একত্রে চেষ্ঠা করলেও বড় নায়ের আরোহীগণের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। এমন ক্ষেত্রে আপনার এই ভ্রান্ত ধর্মপ্রীতি কি জন্য? সেই সব বাতিল হয়ে যাওয়া ধর্মের বাহবা কুড়িয়ে পরকাল বিনষ্ঠ করে আপনার উপকারীতা কি? আপনি একক স্রষ্টাকে না মানলেও আপনার সত্য সৃষ্টিকর্তা যখন শেষ বিচারের দিন আপনাকে নির্ঘাত প্রশ্ন করবেন, কেন তুমি আমার উপাসনা না করে বাজে প্রভুদের উপাসনা করে জীবন বিপন্ন করলে? সেই সব ভ্রান্ত প্রভুরা আজ কোথায়? তখন সকল সৃষ্টিই যদি আপনার মুক্তির জন্য সুপারিশ করে আর তিনি তা গ্রাহ্য না করেন তখন আপনার কি উপায় হবে? সেই একক মহাশক্তির স্রষ্টা কি কারো ধার ধারেন? কাউকে ভয় করেন? অতএব মহাসর্বনাশ ছাড়া বাঁচার কোন উপায় থাকবে না। আবহমান কাল কঠিন অগ্নির লেলিহান শিখায় প্রজ্জলিত হয়ে থাকতে হবে।
আরো পড়ুন : হালাল খাদ্য ও জিকির আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে কতটা জরুরি
যাহোক এবার সকলেই আসুন ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের মৌলিক পার্থক্যগুলো ধীরতার সাথে লক্ষ্য করি ও সচেতন হতে চেষ্ঠা করি।
ইসলাম ফিৎরাতের ধর্ম
ইসলাম ফিৎরাতের ধর্ম, ফিৎরত মানে স্বাভাবিকতা, আর স্বাভাবিকতা সত্য ও অস্বাভাবিকতা অসত্য। আকাশের নীলিমা যেমন স্বাভাবিক, অগ্নির দহনত্ব যেমন স্বাভাবিক, পানির শীতলতা যেমন স্বাভাবিক, সঙ্গত ধর্মধারীদের নিকট ইসলামও তেমনি সহজ স্বাভাবিক ধর্ম। এবার ইসলাম ও অন্যান্য বাতিলকৃত ধর্মের স্বাভাবিকতা ও অস্বভাবিকতাকে একটা সত্য তুলনামুলক নির্মল চিত্র তুলে ধরতে চাই, যাতে করে সকলের সত্য জ্ঞানের উন্মেষ ঘটতে পারে?
ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের বৈসাদৃশ্য
১) (ধর্মীয় দিক) ইসলামী লোকেরা একক স্রষ্টায় বিশ্বাসী, যার ফলে তাদের অন্তর অংশীবাদের পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত। কিন্তু অন্যান্য ধর্মের লোকেরা একক স্রষ্টাতে বিশ্বাসী নয়। যার ফলে তারা আত্মীক দিক থেকে অপবিত্র। আত্মীক পবিত্রতামূলক একত্ববাদের পবিত্রতার দ্বারা সূচিত হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন : তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : মহান আল্লাহ তায়ালার বিশালত্ব ও গুনাবলি
২) একত্ববাদীরা ঘুম থেকে জেগে ওঠে হাত মুখ প্রক্ষালন (অজু) করে থাকে এটাই স্বাভাবিক। কারণ নিন্দ্রাগত ক্লেদাক্ত ভাব শেষে অঙ্গ প্রক্ষালন স্বাভাবিকতার পরিচায়ক, এতে আঙ্গিক সূচিতার কারণে ইবাদত উপাসনার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ইচ্ছে করলে ধৌত করতেও পারে না-ও পারে, তাই এটা অস্বাভাবিক।
৩) যাতে জন্ম তাতেই ক্ষয়, যেমন পৃথিবীস্থ উদগত দ্রব্যাদী মাটিতে গলে পঁচে মিশে যায় এটা স্বাভাবিক, তাই একত্ববাদীরা মাটি থেকে সৃষ্ট মরা দেহকে মাটিতেই মিশে দেবার উদ্দেশ্যে শবদেহকে কবরগত করতে থাকে। কিন্তু অন্যান্য ধর্মধারীরা অসহায় মৃতদেহকে দাহ করে থাকে, এটা অস্বাভাবিক পরন্ত দাহকালীন অবস্থার প্রেক্ষিতে শবদেহকে কখনো কখনো কঠিন ভাবে আঘাত করতেও কুন্ঠিত হয় না, এটা একপ্রকার অমানবিক হৃদয়ের পরিচায়ক তথা অস্বাভাবিক।
৪) একত্ববাদীরা জলক্ষরণ শেষে সূচিতার প্রয়োজনে পানি ব্যবহার করে থাকে, কারণ দেহ থেকে নির্গত যে কোন পদার্থ অসূচ, অন্য ধর্মাবলম্বীরা স্বভাবতই তা করে না এটা দৈহিক অপবিত্রতা, অপরিচ্ছন্নতা ও অস্বাভাবিক।
৫) একত্ববাদীরা যৌনক্রীড়ান্তে দেহের ক্লেদ নিরশনের লক্ষ্যে গোসল করে থাকে, এই গোসল অপরিহার্য্য বা অপরিত্যাজ্য (ফরজ)। শরীরস্থ অপদার্থ অপবিত্র শুক্র ও মহিলাদের উত্তেজনার কামরস নির্গত হয়ে দেহকে অপবিত্রতায় পর্য্যবসিত করে। ফলে ধর্মগত নির্দেশে তারা তা করে থাকে এটা খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু অন্যান্য ধর্মাবরম্বীরা তা করতেও পারে নাও পারে, কাজেই তা নিতান্তই অস্বাভাবিক।
৬) একত্ববাদ ধর্মের সাধকগণ নফসের প্ররোচনামূলক কোন কার্য্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে রাজী হন না। কিন্তু অংশীবাদ ধর্মের সাধকগণ তা করে থাকেন ।
৭) একত্ববাদ ধর্মের সাধকগণ নফসের মোহসৃষ্টিকারী বাদ্যযন্ত্রকে শয়তানের কন্ঠ-স্বর বিবেচনায় তা পরিহার করে চলেন (শেষ প্রেরীত পুরুষ কর্তৃক নিষিদ্ধ)। কিন্তু অংশীবাদের সাধকরা নফসের মোহ ও পাপ সৃষ্টিকারী পৌরাণিক বাতিলকৃত ধর্মের নির্দেশ মতো খোল, করোতাল পিটিয়ে পাপী সেজে থাকেন।
৮) একত্ববাদের সাধকগণ দিনান্তে একবার সীমিত আহার বা রোজা ব্রত পালন করে দেহ ও আত্মাকে অমরত্বে আনয়নের চেষ্ঠা করেন। কিন্তু অংশীবাদ ধর্মের সাধকগণ চর্ব, চুষ্য, লেহ্য ও পেয় দ্বারা দৈহিক ও আত্মীক ভাবে অমরত্ব বিনষ্ঠ করে আত্মাকে একক প্রভুর সাথে মিলনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকেন।
আরো পড়ুন : মানব জীবনে ধর্মের গুরুত্ব কতটুকু
৯) একত্ববাদীরা একক প্রভুর নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় ইবাদত বা উপাসনা করে অমরত্ব লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হন এবং তারা অমরত্বগুণ প্রাপ্ত হয়ে কবরে হাজার হাজার বছর অক্ষত অবস্থায় থাকেন। কিন্তু অংশীবাদীরা নাকচকৃত ধর্মের উপসনার কারণে দৈহিক অমরত্বহীন তথা স্বীয় জীবনকে ব্যর্থতায় পর্য্যবসিত করেন।
১০) অংশীবাদীদের অংশীবাদের কারণে অন্তর অপবিত্র থাকে, তাই একক স্রষ্টার নামবিহীন জীব হত্যায় তারা মহাপাপী রুপে গণ্য হয়ে থাকেন, পরিনামে সেই মাংস ও অপবিত্র হয়ে থাকে, এই অপবিত্র মাংস ভক্ষণের তাছিরে অন্তর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, আর সে অন্তর দ্বারা কৃত উপাসনায় নফস বা শয়তান খুশী হয়, কিন্তু একক স্রষ্টার সৃষ্ট কোন জীবকে তারা তার নাম বিহীন বধে তিনি তাদের প্রতি মহাক্রোধে ক্রোধান্বিত থাকেন।
শেষ কথা
প্রিয় জ্ঞাণী পাঠক মহোদয়গণ, একক প্রভূনির্দেশিত শেষ প্রেরিত পুরুষের প্রবর্তিত ধর্মের নীতিমালা ও বাতিলকৃত ধর্মের নীতিমালার উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তির আলোকেই আপনারা অনুধাবন করতে পারলেন কোনটি সহজ স্বাভাবিক মানব জাতীর জন্য ইহলৌকিক শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির পথ এবার সত্য সন্ধ্যানে মনোনিবেশ করে আসুন মুক্তির চেষ্ঠায় ব্যপৃত হয়ে পড়ি।
উপসংহার : তুলনামুলক ধর্মতত্ত্ব: ইসলাম একটি স্বাভাবিক ধর্ম
প্রিয় পাঠক, লিখিত পোস্টটি কবি সুধী মোজাম্মেল হকে এর ‘মানব জীবনের আয়না’ ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মানীয় কবি সাহেবের “মানব জীবনের আয়না” ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধটি ধারাবাহিকভাবে এই সাইটের সাহিত্য মেনুতে প্রকাশ করা হয়। আপনি এমন তথ্যবহুল আর রহস্যজনক আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাহিত্য পাতা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url