স্বদেশ প্রেম রচনা সকল ক্লাসের

বাংলায় ভালো নম্বর পেতে ভালো রচনা গুরুত্বপূর্ণ। ভাল রচনা পেতে ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠ্যসহ বিভিন্ন বই খুঁজতে থাকে। আজ স্বদেশ প্রেম রচনা তুলে ধরা হলো। শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

স্বদেশ প্রেম রচনা সকল ক্লাসের
পোস্ট সূচিপত্র

স্বদেশ প্রেম রচনা সকল ক্লাসের

রচনা গুলোর মধ্যে স্বদেশপ্রেম একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। বিভিন্ন ক্লাসের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তর কারার জন্য স্বদেশ প্রেম রচনা প্রায়ই প্রশ্নপত্রে থাকে। রচনাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুবই সুন্দর করে সহজ সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করা হলো। স্বদেশ প্রেম রচনা ক্লাস 6, ক্লাস 7, ক্লাস 8, ক্লাস 9, ক্লাস 10, এসএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন হতে পারে। আর কথা নয় চলুন শুরু করা যাক স্বদেশ প্রেম রচনা।

আরো পড়ুন : বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনা

স্বদেশ প্রেম রচনা তে ব্যবহৃত পয়েন্টসমুহ একনজরে

  1. ভূমিকা 
  2. স্বদেশ প্রেম কি 
  3. স্বদেশ প্রেমের উৎস 
  4. স্বদেশ প্রেমের বৈশিষ্ট্য 
  5. মানব জীবনে স্বদেশ প্রেমের প্রভাব 
  6. সাহিত্য ও স্বদেশপ্রেম 
  7. বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও স্বদেশপ্রেম 
  8. স্বদেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ 
  9. স্বদেশ প্রেমের অনুভূতি 
  10. স্বদেশ প্রেমের বিকাশ 
  11. স্বদেশ প্রেমের প্রয়োজনীয়তা 
  12. স্বদেশ প্রেমহীনতার কুফল 
  13. উপসংহার 


আরো পড়ুন :  বইপড়া অনুচ্ছেদ রচনা

স্বদেশ প্রেম রচনা

ভূমিকা: মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তার জন্মভূমিকে ভালোবাসে। জন্মভূমির আলো, বাতাস,জল, সবুজ প্রকৃতি মানুষের মনকে প্রশান্ত করে তোলে।স্বদেশ প্রেমের মধ্যে মানবজাতির নিবিড় প্রশান্তি নিহিত থাকে। প্রকৃত দেশপ্রেম নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে রাখতে শেখায়  না বরং বৃহত্তর পৃথিবীর মধ্যে নিজেকে ছড়িয়ে মহান আদর্শকে প্রচার করে। জন্মস্থানের প্রতিটি ধুলিকণা তার কাছে মনে হয় সোনার চেয়েও দামি।

স্বদেশ প্রেম কি:  “স্বদেশপ্রেম জাতিসত্তার অপরিহার্য উপাদান।”  – গোপালকৃষ্ণ গান্ধী 

প্রিয় মাতৃভূমির মাটি ও তার বীর সন্তানদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করাই হলো প্রকৃত স্বদেশপ্রেম।এক কথায়,স্বদেশ প্রেম হচ্ছে দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। গর্ভধারিণী জননীকে যেমন সন্তান ভালোবাসে,ঠিক তেমনি দেশ মাত্রিকাকে মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই শ্রদ্ধা করতে এবং ভালবাসতে শেখে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের অবশ্য কর্তব্য।

স্বদেশ প্রেমের উৎস: এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই নিজেকে ভালোবাসে, এবং নিজেকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা। কেননা জন্মের পর আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হচ্ছে মা ও মাতৃভূমি। স্বদেশের মাটি,পানি, বাতাসের সাথে আমরা অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ।তাই এগুলোর প্রতি ভালোবাসা থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশ প্রেম। মাছকে যেমন জল থেকে তুলে আনলে ছটফট করতে থাকে,তেমনি মাতৃভূমি থেকে দূরে সরে গেলে মানুষ গভীর আবেগ অনুভব করতে পারে। 

স্বদেশ প্রেমের বৈশিষ্ট্য :  “স্বদেশপ্রেম সংক্ষিপ্ত, আবেগের উন্মত্ত বিস্ফোরণ নয়, বরং সারাজীবনের শান্ত এবং অবিচলিত উত্সর্গ।” – অ্যাডলাই স্টিভেনসন 

মাতৃভূমির প্রতি আকর্ষণ প্রতিটি জীবের স্বভাবজাত ধর্ম। মাছেরা পানিতে, গরুরা গোয়াল ঘরে, পশুরা জঙ্গলে, পাখিরা তাদের শান্ত নীড়ে খুবই স্বাচ্ছন্দ ও পরম সুখ অনুভব করে। প্রতিটি মানুষের তার দেশের সুনাম ও ‍খারাপ সংবাদ যথাক্রমে সুখ ও ‍দুঃখ অনুভব করায়। আর যারা দেশ প্রেমিক তারা নিজের জীবনের চেয়ে দেশের মর্যাদাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

মানব জীবনে স্বদেশ প্রেমের প্রভাব: দেশপ্রেমের প্রভাবে ব্যক্তির মহৎ গুণাবলী প্রকাশ পায়। স্।স্বদেশপ্রেমের প্রভাব ব্যক্তি , পরিবার, সমাজ তথা নিজের দেশের সবকিছুকেই প্রভাবিত করে।স্বদেশ প্রেম মানবীয় গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম। দেশের প্রতি অনুগত একজন কখনো অন্যের ক্ষতি করতে পারে না। প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে দেশপ্রেমের প্রভাব রয়েছে। কবি সমুদ্র গুপ্তের ভাষায়,  "স্বদেশপ্রেম থেকে বিশ্বপ্রেম। যে নিজের দেশকে ভালোবাসে সে বিশ্বপ্রেমিক, মানব-প্রেমিক, মানবতাবাদী"। দেশ প্রেম একজন মানুষের মনকে প্রকৃত মনুষত্বের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করে।  

সাহিত্য ও স্বদেশপ্রেম: সাহিত্যিক স্বদেশ প্রেমের ভূমিকার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।তিনি নিজের ভাষাকে গুরুত্বহীন বলে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভিনদেশে। সেখানে নিজের প্রতিবার কোন গুরুত্ব না পেয়ে এবংনিজের মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝতে পেরে দেশে ফিরে দেশমাত্রিকাকে উপসর্গ করে বলেছেন,

"বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে, কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে?"

এছাড়াও যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী স্বদেশের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।সাহিত্য মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি।যুগ যুগ ধরে সাহিত্যচর্চায় আমরা দেশপ্রেমেরে নানান ধারাবাহিকতা দেখে আসছি।

বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও স্বদেশপ্রেম: বর্তমান এই আধুনিক সমাজে মানুষের মাঝে দেশ প্রেমের সচেতনতার দিন দিন লোপ পাচ্ছে।মানুষ তিন দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে এবং মানুষের মাঝে স্বার্থপরতার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ আজ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত।দেশের মানুষের চিন্তা করার মানসিকতা তার নেই। দেশ প্রেমের চেতনাকে ভুলে গিয়ে নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখছে। এই স্বার্থপরতার মনোভাব এর জন্য ধোনিরা ধনী হচ্ছে আর গরিবরা দিন দিন আরো গরিব হচ্ছে। এর ফলে দেশের অবনতি হয়।তাই আমাদের দেশের ও জাতির উন্নতির জন্য এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব বোঝাতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,

"স্বদেশের উপকারে নাই যার মন

কে বলে মানুষ  তারে,পশু সেই জন।" 

স্বদেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ: স্বদেশপ্রেম মানব হৃদয়ে লালিত হয়।স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষায়, স্বদেশের মানুষের কল্যাণ সাধনে মানুষের মনে স্বদেশপ্রেম জেগে ওঠে। দেশের প্রতি প্রেম সর্বদাই উদার ও খাঁটি। প্রকৃত দেশপ্রেমী কখনো ছোট মানসিকতার হয় না। আমাদের এই মাতৃভূমি এর জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবনে উৎসর্গ করেছে।স্বদেশের তরে জীবন উৎসর্গকারীরা সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তান। এভাবে নিজ স্বদেশের কল্যাণ ও উন্নতি কিভাবে করা যায় তা-ই একজন উপকৃত দেশপ্রেমীর চিন্তার মূল বিষয়।


স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি: নিজ দেশ ও জন্মভূমির প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসাই স্বদেশপ্রেম। স্বদেশের প্রকৃতি ও ধূলিকণা আমাদের নিকট অতি প্রিয় ও পবিত্র।দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থেকে জমা হয় স্বদেশ প্রেমের।দেশের অগ্রগতি ও কল্যাণে ভূমিকা রেখে বিশ্ব সভায় অবদান রেখে দেশের গৌরব বাড়ানো যায়। 

স্বদেশ প্রেমের বিকাশ: মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমি স্বদেশ প্রেমের বিকাশ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় একেকটি স্বতন্ত্র পর্যায়।যেমন মায়ের সাথে রয়েছে আমাদের নারীর বন্ধন যা কখনোই ছিন্ন হবার নয়। ঠিক তেমনি মাতৃভূমি হচ্ছে পৃথিবীর নির্দিষ্ট ভূখণ্ড যেখানে সকল মানবজাতির জন্ম। সুতরাং মা, মাতৃভূমি ভয়ে আমাদের তার হৃদয়  আত্মার সাথে সম্পৃক্ত।

স্বদেশ প্রেমের প্রয়োজনীয়তা: দেশের প্রতি মামত্ববোধ ও ভালোবাসা ব্যতীত ব্যক্তি জীবনকে কখনোই সুন্দর ও সার্থক করা যায় না। দেশী সাফল্য ও সোনার প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যে স্বদেশ প্রেমের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিককে দেশ প্রেমিক আমার প্রয়োজনীয়তা আছে। দেশ প্রেম ছাড়া কখনো একটি দেশ সাফল্যের ছোঁয়া পায় না। দেশ থেকে বড় কোন ধর্ম নেই এবং স্বদেশপ্রেম থেকে বড় কোন কর্ম নেই। স্বদেশপ্রেম মায়ের ভালোবাসার মতো। মা যেমন তার সন্তানকে ভালোবাসে তেমনই একজন দেশপ্রেমিক তার স্বদেশকে ভালবাসে।

স্বদেশ প্রেমহীনতার কুফল: যেকোনো জাতির পতনের উপাখ্যানের সূত্রপাত হয় স্বদেশ প্রেমহীনতায়। দেশপ্রেম যেখানে মানুষের এক উন্নতবৃত্তি, সেখানে তা ত্যাগ তিতিক্ষার মহৎ বৈভবে উদ্ভাসিত, সেখানে তা গৌরবের বস্তু, অহংকারের বিষয়। যে জাতির মধ্যে স্বদেশ প্রেম থাকে না সে জাতি নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। স্বদেশ প্রেমহীনতা দেশের উন্নতি ও কল্যাণের পথে প্রধান অন্তরায়। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য স্বদেশ প্রেম আবশ্যক। 

উপসংহার: দেশপ্রেম মানবজীবনের একটী শ্রেষ্ঠ গুণ ও অমূল্য সম্পদ।স্বদেশ প্রেম মানে দেশের সকল মানুষ একত্রিত হয়ে হিংসা-বিদেষ ভেদাভেদ না করে,সাম্প্রদায়িক বৈষম্য না করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে,স্বার্থপরতা ত্যাগ করে দেশের কল্যাণে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে হবে। তাহলেই দেশ, সামাজিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রসর হতে সক্ষম হতে পারবে।

শেষ কথা : স্বদেশ প্রেম রচনা সকল ক্লাসের

প্রিয় পাঠক, স্বদেশপ্রেম রচনাটি ষষ্ঠ থেকে এইচএসসি পর্যন্ত যেকোনো ক্লাসের জন্য নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন। রচনাটি কেমন হয়েছে জানিয়ে এবং এজাতীয় অন্য কোন রচনার প্রয়োজন হলে কমেন্ট করবেন। স্বদেশ প্রেম রচনা সকল ক্লাসের পোস্টটি শেয়ার করে বন্ধুদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দিন।


লেখক : জান্নাতুন নাবিলা

        আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url