জীবাত্মা ও মানবাত্মার পার্থক্য | আত্মার পরিচয়
জীবাত্মা ও মানবাত্মার পার্থক্য এবং আত্মার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চান? এই পোস্টে জীবাত্মা ও মানবাত্মার মধ্যে পার্থক্য এবং আত্মার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
মানব আত্মা কি? মানব আত্মার আধ্যাতিক পরিচয়
জীবাত্মা ও মানবাত্মা এক জিনিস নয়। মানবাত্মার মাঝে চাক্ষুস ১০টি লতিফা বিদ্যমান। প্রত্যেক মানুষকেই সেই লতিফাসমূহে “আল্লাহ নাম” জারী করে অমরত্ব তথা লোকান্তর প্রাপ্তির পর উচ্চ মার্গে (মর্যাদায়) আরোহণের যোগ্যতা অর্জণ করতে হবে। এছাড়াও মানবদেহে ৭০ হাজার লোমকূপেই ৭০ হাজার লতিফা বিদ্যমান এর দ্বারা সুলতানুল আজকার জারী করাতে পারলে দৈহিক ভাবে ও আত্মিক ভাবে প্রত্যেক মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে। ইসলামে শুধু শরীয়ৎ পালনকারী মুসলমানগণ ও পৌরানিক সকল ধর্মের অনুসারী লোকগণ জ্ঞান ও অনুভূতির অভাবে উপরোক্ত বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক অবগত নয়। অতএব, আত্মীকভাবে তারা মৃত।
আরো পড়ুন : সুন্নত কাকে বলে? সহজ পাঁচটি সুন্নত খুলে দেবে জান্নাতের দুয়ার
জীবাত্মা ও মানবাত্মার পার্থক্য
যাহোক আসল অবতারনা হচ্ছে জীবাত্মা ও মানবাত্মার অবস্থা এক নয়। মানবাত্মার মাঝে নুরে মোহাম্মাদীর (শেষ প্রেরিত পুরুষ মহানবী সা.) নুর বিদ্যমান। আর জীবাত্মায় সে নুরের অবস্থান নেই। মানুষ ব্যতিত সকল জীবাত্মায় শুধু জীবনী শক্তি বিদ্যমান। আর এর অন্তরালে একক স্রষ্টার একটি হুকুম দ্বারা সেগুলো পরিচালিত। তাই জীবাত্মা ও মানবাত্মাকে একইরুপ ধারনা করার মতো ভ্রান্তি আর কিছুই নেই। এটা অনুন্নত ধর্মগত অনভিজ্ঞতা ও সত্য অনভিজ্ঞতা এবং সত্য অনূভূতির অভাব ব্যতিত আর কিছুই নয়। কাজেই ধর্মীয় সত্য অনূভূতি অর্জন করা অত সহজ ব্যাপার নয়। এক কথায় যে মানুষের ধর্মগত আগ্রহ ও পারলৌকিক মুক্তির ধ্যান ধারণা একেবারেই নেই, তারা নিছক সৃষ্টির একটি ক্ষণস্থায়ী স্তরকে (পৃথিবী) মহামূল্যবান মনে করে নিবিষ্ঠ হয়ে স্বীয় জীবন বিপন্ন করছে।
জন্মান্তরবাদের আংশিক পরিক্রমা
পাঠক জন্মান্তরবাদের বিষয়টায় অন্যান্য পৌরানিক অনেক ধর্মানুসারীরা জোর দাবী নিয়ে স্বীয় ধর্ম পালন ও স্বীয় জীবন অতিবাহিত করেছে। আসল কথা হচ্ছে মানুষ সেরা জাতি আর অন্যান্য সৃষ্টিকে তাদের সেবার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। সাধারন বৃক্ষলতা ফল ফুল থেকে শুরু করে সকল সৃষ্টিই তাদের সেবায় নিয়োজিত তথা সেই অনুগত্য গুণেই সকল জীবকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
সৃষ্টির মধ্যে হাতী একটি বিশাল সৃষ্টি সে ইচ্ছা করলে নগন্য মানুষ জাতিকে দলে পিষে মারতে পারতো অথচ তাদের স্রষ্টা বলেছেন, আমি অন্যান্য জীবদেরকে তোমাদের আনুগত্যের গুণ দ্বারা সৃষ্টি করেছি। আর এই আনুগত্যতা শুধু দৈহিক সেবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এমনকি জীবন ছাড়াও অনুগত জীবগণ তাদের স্রষ্টার কথার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। একারণেই অনেক জীবের দেহ ও দেহ নির্যাস দ্বারা মানব শরীরের নিরাময় জনিত চিকিৎসার ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে, প্রকাশ থাকে যে, এরা যদি মানবাত্মার মতো আত্মাধারী হতো, তবে এদেরকে নিধন করে এই ব্যবস্থার অনুশীলন করা কোন ক্রমেই বৈধ হতোনা, এমনকি মহাপাপের কারনরুপে গণ্য হতো। এছাড়াও মানব দেহের সম্পূরক হিসাবে অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে সহজ প্রক্রিয়ায় বধ করে ভক্ষণেরও বিধি জারী রাখা হয়েছে। যা হোক এবার আসল প্রসঙ্গে ফিরে আসতে পারি।
জীবজগৎ একে অপরের উপর নির্ভরশীল
জীব জগৎকে একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল রাখা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এক জীব আরেক জীবের আহার্য্য হিসাবেও সৃষ্টি করা হয়েছে, এই যে একে অপরকে ভক্ষণজনিত অপরাধ বা ঋণী থাকা এই ঋণ পরিশেষে মানুষের মাঝে গিয়ে নিঃশেষ হয়েছে।
আরো পড়ুন : দুনিয়ার মহব্বত সমস্ত গুনাহের মূল
যেমন ছোট্ট একটি নেহাৎ ক্ষুদে পোকাকে বড় একটি পোকা আহার্য্য হিসাবে ভক্ষন করে স্বীয় শরীরের পুষ্টি সাধন করল। এমনতাবস্থায়, সেই বড় পোকাকে মোরগ বা অনুরুপ জাতীয় কোন জীব তার আহার্য্য হিসাবে ভক্ষণ করলো, পরিনামে সেই মোরগকে সৃষ্টির সেরা মানুষ জাতি তাদের আহার্য্য হিসাবে ভক্ষণ করে যে রস রক্তের সৃষ্টি হলো সেই রক্তের দ্বারা শুক্রের সৃষ্টি হলো সেই শুক্রের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাতৃ জঠরে মানব ভ্রণের সৃষ্টি হলো।
আবার দেখুন, গাভী ঘাস জাতীয় দ্রব্যকে আহার্য্য হিসাবে গ্রহণ করে যে উপাদান সৃষ্টি করল সেই উপাদান দ্বারা পরম কৌশলী একক স্রষ্টার শ্রেষ্ট নেয়ামতরুপী দুধকে সৃষ্টি করে মানব শিশুর পুষ্টি সমৃদ্ধ আহার্যে রুপান্তরিত করলেন, এমনিভাবে Rolling system এ জীব জগৎ পরিচালিত হচ্ছে।
তাই জন্মান্তরবাদের সেই স্থুল বিষয়টা উপরোক্ত ধারায় ঘুর্ণায়মান হয়ে মানব জাতীর সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এইভাবে মানুষ প্রতিনিয়ত অন্য জীবের নিকট ঋণী সাব্যস্থ হচ্ছে, সেই ঋণ আংশিক পরিশোধের উপায় হচ্ছে এই সব সৃষ্টির স্রষ্টার নিকট তার সৃষ্ট জীবকে ভক্ষণ ও তাদের সেবা মূলক অনুকম্পার কৃতজ্ঞতা ইবাদৎ বা উপাসনার মাধ্যমে স্বীকার করা। একক স্রষ্টার সৃষ্টি সকল নেয়ামতকে ভোগ করে অকৃতজ্ঞের মত অন্য কোন কিছুকে স্রষ্টা জ্ঞানে স্বীয় নিবেদনকে জ্ঞাপন ও তার নাম ভুলে প্রতিনিয়ত আরেক প্রভুর আরাধনায় জীবন অতিবাহিত তথা বিপন্ন করলেই সকল অনর্থের সূত্রপাত ঘটে থাকে, ও পরিনামে মহাপাপী রুপে গণ্য হতে হয়।
একক স্রষ্টার উপাসনায় (তার নির্দেশিত প্রক্রিয়ায়) অদৃশ্য জগতের যে সব সত্য রহমানী অবস্থার অবতারনা হয়ে থাকে, আজীবন অন্য কোন স্রষ্ঠার নাম কীর্তনে সেই সব দৃশ্যমালা অবলোকনের কেউ যোগ্য হতে পারে না, যদি কারো হয় তা রহমানী নয় বরং শয়তানী।
জন্মান্তরবাদ, জীবাত্মা ও মানবাত্মা
আসল প্রসঙ্গ হচ্ছে জীবাত্মা ও মানবাত্মার স্বরুপ এক নয়। মানবাত্মা অবিনশ্বর আর জীবাত্মা নশ্বর আর এই নশ্বরতা গুণের কারণে তারা অবিনশ্বর মানব জাতীর সেবায় সকলেই নিয়োজিত। মানবাত্মার এই অবিনশ্বরতা গুনের কারণে তারা পাপ দ্বারা অপারাধী ও পুণ্য দ্বারা নৈকট্যপ্রাপ্ত।
মানবাত্মা সকল মানবীয় গুণ অর্জণ ব্যতিরেকে পাপময় অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলেও প্রয়াশ্চিত্ত স্বরুপ তারা শিয়াল, কুকুর বা অন্য জাতীয় প্রাণী হয়ে জন্ম গ্রহণ করবেনা। এই সব জীবের প্রতি মানুষ অত্যাচার করলে পাপের সৃষ্টি হয়ে থাকে, আর এই পাপের ব্যাপারে মহান স্রষ্টার সমীপে অপরাধ স্বীকার মুলক অনুশোচনা অব্যাহত রাখলে তবেই সে স্রষ্টা কর্তৃক মুক্তির সনদ লাভ করে বিচারান্তে স্বর্গবাসী হতে পারে।
আর সেই সব অত্যাচারিত জীবের সুবিধা এই যে, পরলোকে তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন না করে ক্ষমা করে দেয়া হবে। জ্বীন ও মানুষজাতী ব্যতীত করো বিচারও নেই, স্বর্গ নরকও নেই। এছাড়াও একজীব আর এক জীবের প্রতি অত্যাচার করে থাকলে সেই বিচার দিবসে তাদের আকৃতিকে স্রষ্ঠার নির্দেশমূলক আত্মায় রুপান্তরিত করে অত্যাচারিত জীব দ্বারা অত্যাচারী জীবের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে। এর পর তারা স্রষ্টার নির্দেশে মিশিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন : হালাল খাদ্য জিকির আল্লাহর নৈকট অর্জনে কতটা জরুরি
কাজেই মানুষের রুহ বা আত্মা চিরন্তন অবিনশ্বর হেতু মানুষ পাপ করলেই পর জন্মে প্রায়শ্চিত্ত স্বরুপ জীব হয়ে জন্মাবেনা কারণ মানুষ ও জীবাত্মার মৌলিকত্ব এক নয়। তাই পাপ খন্ডনের প্রশ্নে জ্বীন ও মানুষের বিচার শেষে তারা স্বর্গ বা নরক ভোগের যোগ্য হয়ে পড়বে।
অতএব দেখা যাচ্ছে জন্মান্তরবাদের সেই পৌরানিক অনুন্নত স্থুল মতবাদ আধুনিক সত্যধর্ম ইসলামের কষ্ঠি পাথরে টিকে থাকছেনা। তাই সত্যের আলোকে সকলেই সমৃদ্ধ হয়ে যাতে একক শ্রষ্টার নির্দেশিত পথে পরিচালিত হয়ে পরলোকে মুক্তির সনদ পেতে পারি এই আশা পোষণ করেই অত্র অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘোষণা করছি। (আল্লাহু আলামু)
উপসংহার : জীবাত্মা ও মানবাত্মার পার্থক্য | আত্মার পরিচয়
প্রিয় পাঠক, জীবাত্মা ও মানবাত্মার পার্থক্য | আত্মার পরিচয় সম্পর্কিত পোস্টটি কবি সুধী মোজাম্মেল হক এর ‘মানব জীবনের আয়না’ ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মানীয় কবি সাহেবের “মানব জীবনের আয়না” ধর্মতত্ত্বমূলক প্রবন্ধটি ধারাবাহিকভাবে এই সাইটের সাহিত্য মেনুতে প্রকাশ করা হয়। আপনি এমন তথ্যবহুল আর রহস্যজনক আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাহিত্য পাতা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url