জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম কি

জামাতের সাথে নামাজ পড়া কি ফরজ নাকি সুুন্নত? জামাতের নামাজ পড়ার গুরুত্ব, জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম, কি কি কারণে জামাত ত্যাগ করা যায় এরকম আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে পুরো পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম কি? এই প্রশ্নের বিস্তারিত থাকছে, চলুন ‍শুরু করা যাক। 

জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম কি
পোস্ট সূচিপত্র

কুরআন ও হাদিসে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম কি

মহানবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূরো জীবনে সর্বদা জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করেছেন। তিনি কখনো জামাত ছাড়েননি এমনকি তার মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি জামায়াত ত্যাগ করেন নাই। 

এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তার পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনে উল্লেখ করেন-

“অর্থাৎ যারা রুকু করে তোমরা তাদের সাথে রুকু করো” (সূরা বাকারা, আয়াত : ৪৩)

এছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন “একা একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতের সাথে নামাজ পড়ার ফজিলত ২৭ গুণ বেশি" (মুসলিম শরীফ)

আরো পড়ুন : সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম

জামাতে নামাজ পড়ার হাদিস

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জীবন সর্বদা জামাতের সাথে নামাজ পড়েছেন। অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু-ও জামাতের প্রতি প্রচুর যত্নবান ছিলেন। একমাত্র মাজুর ব্যাক্তি ও মুনাফিক ব্যাতিত কেউ জামাত ছাড়তো না। জামাতে নামাজ পড়ার বিষয়ে বহুল পরিচিত হাদিস আমাদের প্রায় সকলেই কম বেশি জানা। যেমন-

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন “আমরা দেখেছি যে আমাদের কেউই জামাতের সাথে নামাজ পড়া থেকে পিছিয়ে থাকতো না। শুধুমাত্র মাজুর ও অসুস্থ ব্যক্তি আর ওই মুনাফিক যার নিফাক সুবিদিত ছিল। এমনকি অসুস্থ ব্যাক্তি দুইজন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে চলতে চলতে নামাজের জামাতে উপস্থিত হতো। তিনি আরো বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দ্বীনের সুন্নত শিক্ষা দিয়েছেন। আর আজান হয় এমন মসজিদে (জামাতে) নামাজ আদায় করা দ্বীনের সুন্নতের মধ্যে অন্যতম। (মুসলিম শরীফ)

আরো পড়ুন : কুনুতে নাজেলা পড়ার নিয়ম

জামাতের নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও বিধান

ইমামের পিছনে ইকতিদা করে তার সঙ্গে একত্রে নামাজ আদায় করাকে জামাত বলে। জামাতের হুকুম সম্পর্কে ইমামগণ থেকে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়, ইমাম আহমদ রহিমাহুল্লাহ বলেন "জামাত ফরজে আইন তবে নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত নয়"। ইমাম শাফিই কারখী ও তাহাভী রহিমাহুল্লাহ বলেন "জামাত ফরজে কেফায়া"। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ ও হানাফী ওলামাদের মতে "জামাত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা তবে ওয়াজিবের কাছাকাছি"

ইসলামি শরিয়তে জামায়াতে নামাজ পড়ার বিধান হিসেবে বলা হয়েছে যে, জামায়াত হলো ইমাম ও মুক্তাদির নামাজের মাঝে অর্জিত বন্ধন। জুমা ছাড়া সকল নামাজে ইমামের সাথে একজন (মুক্তাদী) হলেও জামায়াত আদায় করা হয়ে যায়। জুমার নামাজে ইমাম ছাড়া তিনজন মুক্তাদী হলে জামাত হয়ে যায়।

আরো পড়ুন : তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি : দেহ অমর হওয়ার উপায়

জামাতের সাথে নামাজ পড়া কি ফরজ নাকি সুন্নত

জামাতের সাথে নামাজ পড়া কি ফরজ নাকি সুন্নত এই প্রশ্নে কোরআন হাদিস, ফিকাহবিদ ও আলেম ওলামাদের বিশ্লেষনে এ সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পুরুষের জন্য জামাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তবে গুরুত্বের ক্ষেত্রে জামায়াতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব সদৃশ। শরীয়ত অনুমোদিত ওযর ব্যতীত জামাত ছেড়ে দেওয়া জায়েজ নেই। যে ব্যক্তি ওজর ছাড়া নিয়মিত জামাত ছেড়ে দেয় সে গুনাগার হবে। জুমা এবং দুই ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। সুতরাং জামাত ব্যতীত জুম্মা ও দুই ঈদের নামাজ শুদ্ধ হবে না।

জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম কি


জামাতে নামাজ পড়া সুন্নত নয় কোন ব্যক্তির জন্য

ইসলাম একটি স্বাভাবিক ধর্ম। এই ধর্মে কারো উপর জোর বা অসাধ্য কিছু আরোপ করা হয় নি। জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে প্রচুর সেই সাথে কোন কোন ব্যাক্তির জন্য জামাত নিষ্প্রয়োজন বা শিথিল করা হয়েছে। হানাফি মাজহাব অনুযায়ী জামাতে নামাজ পড়া সুন্নত নয় কোন ব্যাক্তির জন্য তা নিম্নে তুলে ধরা হলো। 

  • ১। শুধুমাত্র পুরুষরাই জামাতে নামাজ আদায় করবে সুতরাং মহিলাদের জন্য জামাত সুন্নত নয়।
  • ২। বালেক বা প্রাপ্তবয়স্কগন জামাতে নামাজ আদায় করবে সুতরাং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জামাত সুন্নত নয়।
  • ৩। জামাতে নামাজ আদায় করতে হলে স্বাভাবিক জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।  অতএব পাগলদের জন্য জামাত সুন্নত নয়।
  • ৪। জামাতে নামাজ আদায় করতে সকল ওজর মুক্ত হতে হবে সুতরাং মাজুরদের জন্য জামাত সুন্নত নয়।
  • ৫। জামাতের জন্য স্বাধীন হতে হবে অতএব গোলামের জন্য জামাত সুন্নত নয়।

এখানে উল্লেখ্য যে মহিলা, অপ্রাপ্তবয়স্ক, পাগল, অপারগ, এবং গোলাম ব্যাক্তিগণ জামাতে নামাজ আদায় হতে রহিত। তবে এদের কেউ যদি জামাতের সাথে নামাজ পড়ে তাহলে তাদের নামাজ শুদ্ধ হবে এবং এজন্য তারা অধিক সাওয়াব অর্জন করবে।

আরো পড়ুন : হালাল খাদ্য ও জিকির আল্লাহ নৈকট্য অর্জনে কতটা জরুরী

কি কি কারণে জামাত ত্যাগ করা যায়

মাওলানা শফীকুর রহমান নদভী (রহ.) রচিত হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সংকলিত আল ফিকহুল মুয়াস্সার গ্রন্থে কি কি কারণে জামাত ত্যাগ করা যায় বা কোন কোন ওজনের কারণে জামাতে উপস্থিত হওয়া রহিত হয় তার বিশদ আলোচনা রয়েছে। এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে তা তুলে ধরা হলো।

১। যখন আকাশ হতে প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ হয়।
২। যখন প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে এবং নামাজী আশঙ্কা করে যে, যদি সে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয় তাহলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে অথবা তার অসুস্থতা আরোও বেড়ে যাবে।
৩। যখন রাস্তায় খুব কাঁদা থাকে।
৪। যখন প্রচন্ড অন্ধকার হয়।
৫। যখন রাতে প্রচন্ড বাতাস প্রবাহিত হয়।
৬। যখন মুসল্লী অসুস্থ হয়ে যায়।
৭। যখন মুসল্লি বা নামাজী অন্ধ হয়।
৮। যখন মুসল্লী বা নামাজী এমন বয়োবৃদ্ধ হয় যে, সে মসজিদ পর্যন্ত হাঁটতে সক্ষম নয়।
৯। যখন মুসল্লি অসুস্থ ব্যক্তির দেখাশুনায় নিয়োজিত থাকে।
১০। যখন মুসল্লী বা নামাজী প্রসাব পায়খানা চেপে রাখে।
১১। যখন মুসল্লী বন্দী থাকে। চাই তাকে অপর কারো অধিকারের জন্য বন্দী করা হোক অথবা অন্যায়ভাবে বন্দী করা হোক।
১২। যখন মুসল্লির দুই পা অথবা এক পা কাঁটা হয়।
১৩। যখন মুসল্লী বা নামাজীর এমন কোন রোগ হয় যা নিয়ে চলতে সে সক্ষম নয়। যেমন পক্ষাঘাত রোগ।
১৪। যখন নামাজীর সামনে খাবার হাজির হয় আর সে খুবই ক্ষুধার্ত থাকে এবং তার মন খারারের প্রতি উৎসাহী থাকে।
১৫। যখন মুসল্লি সফরের প্রস্তুতি নেয়।
১৬। যখন জামাতে হাজির হলে মুসল্লি তার সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করে।
১৭। যখন জামাতে শরিক হলে মুসল্লী রেলগাড়ি ছেড়ে দেওয়া অথবা প্লেন মিস করার আশঙ্কা করে।

কি কি কারণে জামাত ত্যাগ করা যায়

আরো পড়ুন : অল্প আমলে বেশি সওয়াব পাওয়ার দোয়া

জামায়াতে নামাজ না পড়ার শাস্তি

হানাফি মাযহাবের প্রবর্তক ইমাম আবু হানিফা তার বিভিন্ন কিতাবে জামায়াতের নামাজ পড়ার ব্যাপারে উম্মাহের উপর গুরুত্বারোপ করেন। হানাফি মাজহাবের মাওলানা শফীকুর রহমান নদভী (রহ.) রচিত হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সংকলিত আল ফিকহুল মুয়াস্সার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, জামায়াতে নামাজ আদায় গুরুত্বের ক্ষেত্রে ওয়াজিব সদৃশ। শরীয়ত অনুমোদিত কোন ওযর ব্যতীত জামাত ছেড়ে দেওয়া জায়েজ নেই। যে ব্যক্তি ওজর ছাড়া নিয়মিত জামাত ছেড়ে দেয় সে গুনাগার হবে। জামায়াতে নামাজ না পড়ার শাস্তি এর ব্যাপারে একমাত্র পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ সুবহানুতায়ালার আয়াতসমুহ, বিশ্বনবী জনাবে মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সা. এর হাদিসমুহ, সাহাবা আজমাইন, তাবিই, তাবে-তাবিইগণ, ইমামগন, ফিকহবিদগন ও বিভিন্ন আলেম ওলামাগণের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, কোন ওজর ছাড়া জামায়াতে নামাজ ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। এটি সুন্নতের খেলাপ।

উপসংহার : জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম কি

প্রিয় পাঠক, জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম কি পোস্টটি পড়ে নিশ্চই জানতে পেরেছেন, জামাতের সাথে নামাজ পড়া কি ফরজ নাকি সুুন্নত? জামাতের নামাজ পড়ার গুরুত্ব, জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম, কি কি কারণে জামাত ত্যাগ করা যায় ও জামায়াতে নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের জানাতে পোস্টটি সেয়ার করুন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url