কুনুতে নাজেলা পড়ার নিয়ম
কুনুতে নাজেলা পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? এই পোস্টে কুনুতে নাযিলাহ কি? কুনুতে নাজিলা কেন পড়তে হয়? কখন পড়তে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন আর জেনে নিন কুনুতে নাজেলা সম্পর্কে বিস্তারিত।
পোস্ট সূচিপত্রকুনুতে নাজেলা কি? কুনুতে নাজিলা কেন পড়তে হয়?
সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ বা উন্মাহর কোনো কঠিন বিপদ, রোগ ব্যাধি বা বিপর্যয়ের সময় কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব। এটিকে বিপদাপদের কুনুত বলা হয়ে থাকে। কুনুতে নাজেলা অর্থ হলো বিপদাপদের কুনুত। উম্মাহর যেকোন বিপদে জামায়াতের সাথে কুনুতে নাজিলা পড়তে হয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন হাদিস রয়েছে। হাদিসে দেখা গেছে জামায়াতে ফজরের নামাজ বা সকল নামাজের শেষ রাকাতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর সকল মুসল্লীদের নিয়ে দোয়া করাকে কুনুতে নাজেলা বলা হয়।
আরো পড়ুন : আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম
কুনুতে নাজেলা কখন পড়তে হয়?
কুনুতে নাজেলা কখন পড়তে হয়? এই প্রশ্নে বিভিন্ন মাজহাবের ফকিহগণ ও বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামগণ বলেন যে, কুনুতে নাজিলা ফজরের নামাজ বা প্রয়োজনে সকল নামাজের শেষ রাকাতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর সকল মুসল্লীদের নিয়ে পড়তে হয়। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি সুন্নত। বর্তমানে কুনুতে নাজেলা নিয়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে অনেকেই মনে করছেন হানাফী মাযহাবে এরূপ কুনুত বৈধ নয়।
কুনুতে নাজেলা পড়ার নিয়ম
হানাফি মাজহাবের ফকিহগন বলেন যে, বিপদ, বিপর্যয় ছাড়া কুনুতে নাজিলা পাঠ করার প্রয়োজন নাই। উম্মাহর বিপদ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ফজরের সালাতে ও অন্যান্য সালাতে নাজিলা পাঠ করা উত্তম। আল্লামা আলাউদ্দিন হাছকাফি (হানাফি) বলেন
“বিতর ছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত পাঠ করা যাবে না। তবে বিপদ বিপর্যয়ের সময় উচ্চ স্বরে কুরআন পাঠের সালাতগুলোতে (ফজর, মাগরিব ও এশা) ইমাম কুনুত পাঠ করতে পারবেন।”
আল্লামা ইবনু আবেদীন শামী বলেন, সাধারণ অবস্থায় বিতের ছাড়া অন্য কোন সালাতে কুনুত পাঠ রহিত হয়েছে। তবে বিপদ-আপদ বা বিপর্যয়ের সময় ফজর বা সশব্দে কুরআন পাঠ করা হয় সেই সালাত গুলোকে কুনুত পাঠ করা সুন্নত। ইমাম যদি মনে করেন তিনি মনে মনেও কুনুত পাঠ করতে পারবেন। ইমাম মনে মনে পাঠ করলে মুক্তাদিরও মনে মনে পড়বেন। আর ইমাম যদি স্বশব্দে পাঠ করেন তবে মুক্তাদী শেষে আমিন বলবেন। আর কুনুতে নাজিলা বা বিপদাপদের কুনুত ফজর, মাগরিব ও এশা নামাজের শেষ রাকাতের রুকুর পরে পড়তে হবে।
কুনুতে নাজেলা আরবী
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ وَنَشْكُرُكَ) وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلّى وَنَسْجُدُ وَلَكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ نَخْشى عَذَابَكَ الْجِدَّ وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحِقٌ.
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَأَلِفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوّكَ وَعَدُوّهِمْ اللَّهُمَّ الْعَنْ كَفَرَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيْلِكَ وَيُكْذِبُوْنَ رُسُلَكَ وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِي لَا تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ.
আরো পড়ুন : চুল ও নখ কাটার ইসলামিক নিয়ম
কুনুতে নাজেলা বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা, ইন্না- নাস্তা'য়ীনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নুসনি আলাইকা, নাশকুরুকা ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মান ইয়াফজুরুকা । আল্লা-হুম্মা ইয়াকা- না—বুদু, ওয়া লাকা নুছাল্লী ওয়া নাসজুদু, ওয়া লাকা নাস্’আ- ওয়া না‘হফিদু, ওয়া নাখশা আযাবাকাল জিদ্দা, ওয়া নারজু রাহমাতাকা,, ইন্না ‘আযাবাকা বিল কাফিরীনা মুল’হিক্ব।
আল্লা-হুম্মাগ্ফির লানা ওয়া লিল মু'মিনীনা ওয়াল মু'মিনাতি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমা-ত। ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলূবিহিম, ওয়া আস্বলি'হ যাতা বাইনিহিম, ওয়ানসুরহুম ‘আলা ‘আদুওয়িকা ওয়া ‘আদুওয়িহিম। আল্লা-হুম্মাল‘আন কাফারাতা আহলিল কিতাবিল্ লাযীনা ইয়াছ্ছুদ্দূনা ‘আন সাবীলিকা ওয়া ইউকা্যিবুনা রুসূলাকা ওয়া ইউকা-তিলূনা আওলিয়ায়িকা। আল্লা-হুম্মা, খালিফ বাইনা কালিমাতিহিম, ওয়া যালযিল আক্বদামাহুম, ওয়া আনযিল বিহিম বা’সাকাল লাযী লা- তারুদ্দুহূ ‘আনিল ক্বাওমিয যালিমীন।”
আরো পড়ুন : শিরক ও অপবিত্রতা
কুনুতে নাজেলা বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আপনার প্রশংসা ও গুণকীর্তন করছি। আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আপনার প্রতি অকৃতজ্ঞতা-অবিশ্বাস প্রকাশ করি না। আমরা বিচ্ছিন্ন হই এবং পরিত্যাগ করি তাকে, যে আপনার অবাধ্য হয়। হে আল্লাহ, আমরা কেবলমাত্র আপনারই ইবাদত করি, কেবলমাত্র আপনার জন্যই সালাত আদায় করি এবং সাজদা করি, শুধু আপনার দিকেই ধাবিত হই এবং আপনার আনুগত্যেই কর্ম করি আমরা আপনার প্রকৃত শাস্তির ভয় করি এবং আপনার রহমত আশা করি । নিশ্চয় আপনার শাস্তি কাফিরদেরকে স্পর্শ করবে।
হে আল্লাহ, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, এবং মুমিন পুরুষদেরকে এবং মুমিন নারীদেরকে, এবং মুসলিম পুরুষদেরকে এবং মুসলিম নারীদেরকে, তাদের অন্তরের মধ্যে সম্প্রীতি প্ৰদান করুন, তাদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক সুন্দর করে দিন, আপনার ও তাদের শত্রুদের উপর তাদের বিজয় প্রদান করুন। হে আল্লাহ, যে সকল আহলে কিতাব আপনার পথ থেকে মানুষদেরকে বাধা দেয়, আপনার রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে এবং আপনার ওলীগণের সাথে যুদ্ধ করে তাদের অভিশপ্ত করুন, তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করুন, তাদের পদসমূহ কম্পমান করুন, তাদের উপর আপনার শাস্তি নাযিল করুন- যে শাস্তি অপ্রতিরোধ্য ভাবে পাপাচারী সম্প্রদায়কে পাকড়াও করে।
আরো পড়ুন : দুনিয়ার মহব্বত সমস্ত গুনাহের মূল
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url