সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম

সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন আর বিস্তারিত জেনে নিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসের আলোকে সালাতুত দোহা নামাজ কি? সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম ও এর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে।

সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম
পোস্ট সূচিপত্র

সালাতুদ দুহা কি

প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত। আমরা সকলেই জানি যে, নামাজ মূলত তিন প্রকারের হয় ফরজ নামাজ, সুন্নত নামাজ ও নফল নামাজ। এই পোস্টে আমরা, নফল নামাজ সালাতুত দোহা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনীয় ফরজ ও সুন্নাহ নামাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু নফল নামাজ রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদিস থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, ফরজের পাশাপাশি অতিরিক্ত এই নফল নামাজগুলো আদায় করলে অতিরিক্ত কিছু সওয়াব হাসিল ও মর্যাদার অধিকারী হওয়া যায়। প্রতিটি মুমিন নর-নারীর জন্য এরকম একটি অতিরিক্ত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নফল সালাত হলো সালাতুদ দোহা। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।

আরো পড়ুন : আজান ও ইকামতের জবাব দেওয়ার নিয়ম

সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম চাশত ও ইশরাকের নামাজ কি?

তাহাজ্জুদ নামাজের পরে মুসলমানদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাসনুন নামাজ হল সালাতুত দোহা নামাজ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন হাদিসের এই নামাজকে “আওয়াবিনের নামাজ” যার অর্থ হল “আল্লাহ ওয়ালাগণের নামাজ” বলে অবহিত করা হয়েছে। আমাদের দেশে এই নামাজকে কেউ কেউ ইশরাকের নামাজ ও চাশতের নামাজ বলে জেনে থাকবেন। অর্থাৎ আমাদের দেশে সূর্যোদয়ের পরপরই যে নামাজ পড়া হয় তাকে ইশরাকের নামাজ এবং এর পরে যে নামাজ পড়া হয় তাকে দোহা বা চাশতের নামাজ বলা হয়ে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর বিভিন্ন হাদিস এবং বিশ্বের অন্যতম সব ওলামায়ে কেরামগণের মতে ইশরাকের নামাজ বলে শব্দটি কোথাও পাওয়া যায় না। এছাড়া হাদিসের কোথাও দোহার নামাজ এবং ইসরাকের নামাজের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য দেখা যায় না। 

সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম


সালাতুত দোহা নামাজের ওয়াক্ত বা চাশত ও ইশরাকের নামাজ পড়ার সময়

আমরা সকলেই জানি সূর্যোদয়ের সময় নামাজ পড়া না জায়েজ বা সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। আর সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার সময় সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন হাদিসের আলোকে ওলামায়ে কেরামগণ প্রায় সকলেই একমত যে, সূর্য পরিপূর্ণরূপে উঠে যাওয়ার পরে অর্থাৎ সূর্যোদয়ের মুহূর্ত থেকে প্রায় ২০-২৫ মিনিট পরে সালাতুত দোহা নামাজের ওয়াক্ত বা চাশত ও ইশরাকের নামাজ পড়ার সময় শুরু হয়। আর সূর্য পরিপূর্ণরূপে উঠে যাওয়ার পর হতে দ্বিপ্রহরের আগে অর্থাৎ দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ের যে কোন সময় এই নামাজ আদায় করা যায়। 

আরো পড়ুন : চুল ও নখ কাটার ইসলামিক নিয়ম

সালাতুত দোহা কত রাকাত পড়তে হয়?

সালাতুত দোহা কত রাকাত পড়তে হয় এ নিয়ে অনেক মতোভেদ থাকলেও প্রশিদ্ধ ফকিহগণ ও বিশ্বের প্রায় সকল ওলামায়ে কেরামগণ প্রায় সকলেই একমত যে, সালাতুত দোহা নামাজ দুই থেকে বার রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়। বাংলাদেশের অন্যতম, সুপরিচিত ও বিখ্যাত আলেম মাওলানা আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার তাঁর “রাহে বেলায়েত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, সালাতুত দোহা নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক না করে এই নামাজের ওয়াক্তে সাধ্যমত দুই থেকে বার রাকাতের মধ্যে জোড় সংখ্যা বিশিষ্ট রাকাত সংখ্যা নির্ধারন করে নামাজ আদায় করলেই এই নামাজের পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে।

সালাতুত দোহা নামাজের নিয়ত

সালাতুত দোহা নামাজের নিয়ত অন্যান্য সকল নামাজের নিয়তের মতোই। যদিও বর্তমানে নামাজের নিয়ত করা নিয়ে বিভিন্ন মতোভেদ সৃষ্টি হয়েছে। তাবে সবথেকে উত্তম হবে ঐসব মতভেদের দিকে কান না দিয়ে কুরআন এবং হাদিসের আলোকে আমল করা। আর তাই বলা যায় এই নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার দরকার হয় না মনে মনে সংকল্প করতে হবে যে, আমি দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি। তাহলেই সালাতুত দোহা নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে। এভাবে দুই দুই রাকাআত করে সাধ্যমত বার রাকাআত পর্যন্ত সালাত আদায় করলেই পূর্ণ সওয়াব হাসিল করা সম্ভব।

হাদিসের আলোকে সালাতুত দোহা

হাদিসের আলোকে সালাতুত দোহা নামাজের আলোচনায় বলা যায় যে, এ নামাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হলো ফজরের সালাত জামাতে আদায় করে নিয়ে বসে বসে বিভিন্ন জিকির-আজগার ও মাসনুন দোয়া করতে থাকতে হবে। এরপর সূর্য পূর্ণরূপে উঠে গেলে এই নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।

আরো পড়ুন : কতটুকু দুরত্বে গেলে কছরের নামাজ পড়তে হয়

বিভিন্ন হাদিসের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করবে অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। সে একটি পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ হজ্ব ও একটি ওমরার সওয়াব অর্জন করবে।” (আলবানী, সহিহুত তারগিব)।

মহিলারা ঘরের মধ্যে সালাতের স্থানে বসে এই হাদিস পালন করলে ইনশাআল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত সওয়াব তারাও অর্জন করবে।

সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম


সালাতুত দোহা নামাজের ফজিলত

সালাতুত দোহা নামাজের ফজিলত অনেক সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এ সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা হয়। আল্লাহর নৈকট্যর অর্জন করা যায়। ইহকালীন ও পরকালিন আধ্যাতিক মর্যাদা পেতে এ নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাতুত দোহা নামাজ আদায়কারীকে আল্লাহ সারাদিন হেফাজত করেন। সেই সাথে দুনিয়াবি বিভিন্ন মর্যাদা, সম্মান দান করেন আর অসীম সওয়াবের সুসংবাদ তো রয়েছেই। আর তাই আমাদের উচিৎ ফজরের সালাত আদায়ের পর মসজিতে বসে অপেক্ষা করা সম্ভব না হলেও কর্মব্যস্ততার ফাঁকে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে হলেও সালাতুত দোহা আদায় করা।

আরো পড়ুন: শিরক ও পবিত্রতা

উপসংহার : সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কিত এই পোস্টটি করে আপনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন সালাতুত দোহা নামাজ কি? সালাতুত দোহা নামাজ পড়ার নিয়ত, নিয়ম, গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url