গর্ভাবস্থায় পানি পান করার উপকারিতা
প্রতিটি মহিলার গর্ভাবস্থা একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়, আর এই সময়ে শরীর হাইড্রেট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কারণে গর্ভাবস্থায় পানি পান করার গুরুত্ব ও অপকারিতা রয়েছে। এটি গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। গর্ভাবস্থায় পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই প্রশ্নের শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রগর্ভাবস্থায় পানি পান করার উপকারিতা
গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে অবশ্যই শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে এবং শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করতে হবে। এ সময় মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যার ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত পরিচর্যা এবং নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান অত্যন্ত জরুরী। আর গর্ভাবস্থায় পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থার পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা
পানি পান দেহের পুষ্টি শোষণ এবং পুষ্টি পরিবহনে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রয়োজন হয়। আর এ সময় যে খাবার খাওয়া হয় সেই খাবার থেকে মিশ্রিত প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করার ক্ষমতা দেহে থাকতে হয়। পর্যাপ্ত পানি পান করা যার একমাত্র উপায়। দেহের পানি আপনার গলার্ধকৃত খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে পারে। দেহের পুষ্টি এবং অক্সিজেন রক্ত প্রবাহে সাহায্য করে সেই সাথে আপনার শরীরের পুষ্টি গর্ভের সন্তানের কাছে পৌঁছাতে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে গর্ভবতী মায়ের সুস্থতা এবং গর্ভের শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য গর্ভাবস্থায় পানি পান করার উপকারিতা রয়েছে।
গর্ভে স্বাস্থ্যকর অ্যামনিওটিক তরল সুরক্ষিত রাখে
অ্যামনিওটিক তরল গর্ভে আপনার শিশুকে ঘিরে রাখে, সুরক্ষা প্রদান করে এবং সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে সঠিক পরিমাণে অ্যামনিওটিক তরল শক্তিশালী হয়। ফলে গর্ভের সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে, যা আপনার গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুর বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ হয়। তাই গর্ভের অ্যামনিওটিক তরল স্বাভাবিক রাখতে গর্ভাবস্থায় পানি পান করার উপকারিতা প্রচুর।
আরো পড়ুন : গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
গর্ভাবস্থায় পানি পান মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়
গর্ভাবস্থায় পানি পান মূত্রনালীর সব ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে অভাবনীয়ভাবে। এ সময় সামগ্রিকভাবে হরমোনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। যার ফলে মূত্রনালীতে সংক্রমন হতে পারে যা অত্যান্ত বিরক্তিকর ও অসুস্থতা আনায়ন করতে পারে। জরায়ু প্রসারিত হওয়ার চাপের কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রচুর পানি পান করা মূত্রনালী থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে যার ফলে মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না।
ডিহাইড্রেশন সম্পর্কিত জটিলতা প্রতিরোধ করে
গর্ভাবস্থায় পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন সম্পর্কিত জটিলতা প্রতিরোধ করতে পর্যাপ্ত পানি পান করার বিকল্প নেই। শরিরের পানি শুন্যতাকে ডিহাইড্রেশন বলা হয়। গর্ভাবস্থায় ডিহাইড্রেশন হলে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্র্যাম্প এমনকি অকাল প্রসবসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করা পানিশূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে, এই ঝুঁকিগুলোকে সহজেই এড়ানো যায়।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে কি হয়
হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক হজম হওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত থাকা জরুরী। এ সময় প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচনতন্ত্রকে ধীর করে দিতে পারে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হযতে পারে। এ সময় পর্যাপ্ত পানি পান করলে মল নরম হয় এবং নিয়মিত স্বাভাবিক মলত্যাগে সহায়তা করে। তাই গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পানি পান করার বিকল্প নেই।
ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা স্বাভাবিক করে
গর্ভাবস্থায় প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান শিশুর বৃদ্ধির জন্য শরীরের ত্বক প্রসারিত হয়। তাই এ সময় ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা স্বাভাবিক রাখা জরুরী যার জন্য শরীরকে হাইড্রেশন রাখতে হবে। সঠিক হাইড্রেশন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনার শরীর আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুর জন্য প্রসারিত করতে পর্যাপ্ত পানি পান করা একান্ত প্রয়োজন।
শরীরের সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
গর্ভাবস্থায় শরীরের সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক রাখা একান্ত প্রয়োজন। শরীর হাইড্রেটেড থাকলে তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর অতিরিক্ত গরম গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভের শিশুর উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
হাত পায়ের পানি ও অবাঞ্চিত ফোলা কমায়
গর্ভাবস্থায় অবাঞ্চিতভাবে হাত এবং পায়ে পানি জমা বা ফুলে যেতে পারে একে এডিমা বলা হয়ে থাকে। আর এই এডিমা শরীরে পানি শূন্যতার কারণে হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বেরিয়ে যায় ফলে শরীর বেশি পরিমান তরল ধরে রাখতে পারে না। আর তাই হাত এবং পায়ে পানি জমে না এবং অবাঞ্ছিতভাবে ফুলে যাওয়া রোধ করতে পারে।
সামগ্রিকভাবে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি এবং সুস্থতা বাড়ায়
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং সামগ্রিকভাবে শরীরের সুস্থতা বাড়ায়। গর্ভাবস্থার প্রতিটি নারীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন এবং সুস্থ থাকা প্রয়োজন। আর হাইড্রেশন হলো শরীরের উচ্চ শক্তির উৎস বা মূল চাবিকাঠি যা প্রতিটি নারীর জন্য গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত জরুরী।
উপসংহার : গর্ভাবস্থায় পানি পান করার উপকারিতা
প্রতিটি স্বাস্থ্যকর গর্ভস্থ গর্ভাবস্থার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জামা এবং গর্ভের সন্তান উভয়েরই উপকার করে। প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের সর্বনিম্ন 10 কাপ বা নিম্নে আড়াই লিটার পানি পান করতেই হবে। আর শরীরে চাহিদা অনুযায়ী এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে তৃষ্ণার্ত হলে অবশ্যই পানি পান করতে হবে। আর অবশ্যই গর্ভাবস্থায় আপনি কি পরিমান পানি পান করবেন তা আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করবেন।
গর্ভাবস্থায় পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কিত এই পোস্টটি কেমন লাগলো জানিয়ে কমেন্ট করুন ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url