সদকাতুল ফিতরা কার উপর ওয়াজিব
সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। ফিতরা আদান প্রদানের জন্য ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক কুরআন হাদিস ও ফিকাহ বিধগণের মতামত অনুযায়ী সদকাতুল ফিতরা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকে এই পোষ্ট। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সদকাতুল ফিতরা কার উপর ওয়াজিব সহ ফিতরা সম্পর্কে অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য।
পোস্ট সূচিপত্রসদকাতুল ফিতরা কার উপর ওয়াজিব
মুসলিম উম্মাহর জন্য বছরে একবার পবিত্র মাস রমজান এর ৩০ টি রোজা শেষে খুশির একটি দিনের আগমন হয়। এই দিনটিকে ঘিরে মুসলমানদের প্রত্যেকটি পরিবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে পবিত্রতার সাথে উদযাপন করে থাকে। ইসলামী শরীয়তে পবিত্র রমজানুল মোবারকসহ পবিত্র ঈদের দিনে বিভিন্ন রকম ইবাদতের কথা কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা রয়েছে দীর্ঘ এক মাস রমজানুল মোবারকের সিয়াম সাধনা পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন প্রত্যেকটি রোজা রোজাদার বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ইবাদতের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করে আসছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আরেকটি প্রধান অংশ হল সাদাকাতুল ফিতর বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে দান খয়রাত করা। পবিত্র কুরআনুল কারীম এবং হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস অনুযায়ী এবং হানাফী মাযহাবের ফিকাহাবিদের মতামত অনুযায়ী সাদাকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব সহ এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আর কথা না চলুন শুরু করা যাক সাদাকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব এবং এ সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত।
এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করা হলো যে, এই পোস্টে যে তথ্যগুলো প্রদান করা হবে সেগুলো হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সংকলিত মাওলানা শফিকুর রহমান নদভী রহমাতুল্লাহ প্রণীত আল ফিকহুল মুয়াস্সার (আরবি-বাংলা) গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : ঈদ মোবারক শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস ও ছবি ২০২৪
সদাকাতুল ফিতর কি ও কেন? কাদের উপর ওয়াজিব
ফিকাহ বিদগণ সাদাকাতুল ফিতরের বর্ণনা দিতে গিয়ে এর সংজ্ঞায় বলেন যে, সদকাতুল ফিতর হলো, ঈদুল ফিতরের দিন মুসলমান তার সম্পদ থেকে নিজের পবিত্রতার জন্য এবং তার রোযার অপ্রয়োজনীয় ও অশ্রীল কথাবার্তার মত যেসব ভুল ত্রুটি হয়ে গেছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে গরিব ও অভাবীদের যে অর্থ বা খাদ্য প্রদান করা হয় তাই সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা নামে পরিচিত।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- সদকাতুল ফিতর ফরয (ওয়াজিব) করেছেন অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে রোযাদারের পরিশুদ্ধতার জন্য এবং গরিব ও অভাবীদের মেহমানদারি স্বরূপ। (আবূ দাউদ)
যে ব্যক্তির মাঝে তিনটি শর্ত পাওয়া যায় তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব ।
- মুসলিম হওয়া । সুতরাং কাফেরের উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়।
- স্বাধীন হওয়া । সুতরাং ক্রীতদাসের উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়।
- নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া যা তার ঋণ ও তার পরিবার-পরিজনের নিত্য প্রয়োজনীয় মালের উদ্বৃত্ত হবে । সুতরাং যে ব্যক্তি তার ঋণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় মাল থেকে উদ্বৃত্ত নেসাবের মালিক নয় তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অন্তর্ভুক্ত-
- বসবাসের ঘর
- ঘরের ব্যবহার্য সামগ্রী
- বস্ত্র
- বাহন
- যন্ত্রাংশ, জীবিকা উপার্জনে যা দ্বারা মানুষ সাহায্য নেয়।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমান সম্পদ থাকা অবস্থায় পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। বরং ঈদের দিন সুবহে সাদিকের উদয়কালে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা প্রদান তার জন্য ওয়াজিব। অনুরূপভাবে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য বালেগ অথবা জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া শর্ত নয়। যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে নাবালেগ এবং পাগলের সম্পদ থেকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করতে হবে।
সদাকাতুল ফেতর কাদের পক্ষ থেকে দিতে হবে ও এটি কখন ওয়াজিব হয়
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের উদয়ের সময় সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এর পূর্বে মারা যায় বা ফকির হয়ে যায় তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়। অনুরূপভাবে সুবহে সাদিকের উদয়ের পরে যে সন্তান জন্ম লাভ করেছে অথবা সুবহে সাদিকের উদয়ের পরে যে ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেছে কিংবা ধনী হয়েছে, তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না । সদকাতুল ফিতর ঈদের নামাজ আদায়ের আগে বা পরে আদায় করা জায়েয আছে। তবে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই আদায় করা মোস্তাহাব। কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলে পূরো রমযান মাসে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারে। তা জায়েয আছে এবং উত্তম। যাতে দরিদ্র ব্যক্তি তার ও পরিবারের ঈদের পোশাক তৈরি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারে । ঈদের নামাযের পর পর্যন্ত তা আদায়ে বিলম্বিত করা মাকরূহ । তবে ওজরের কারণে বিলম্বিত হলে ভিন্ন কথা।
সদকাতুল ফিতর প্রদান করা ওয়াজিব-
- নিজের পক্ষ থেকে
- সম্পদহীন নিজের ছোট ছেলে-মেয়েদের পক্ষ থেকে
আরো পড়ুন : ঈদ মোবারক পিকচার ২০২৪
সদকাতুল ফিতরের পরিমান
যদি সন্তানরা ধনী হয় (অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক) তাহলে তাদের সম্পদ থেকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করতে হবে । পুরুষের জন্য তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করা ওয়াজিব নয় । তবে নফল হিসেবে দিলে জায়েয আছে । অনুরূপভাবে পুরুষের উপর তার সম্পদহীন বালেগ ছেলে-মেয়েদের পক্ষ থেকে যদি তারা জ্ঞানসম্পন্ন হয়, সদকাতুল ফিতর প্রদান করা ওয়াজিব নয়, তবে নফল হিসেবে দিলে জায়েয আছে । যদি সম্পদহীন বালেগ ছেলে-মেয়ে পাগল হয় তবে তাদের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করা তার উপর ওয়াজিব।
ফিতরা কি দিয়ে আদায় করা উত্তম
এবার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। ফিতরা কি দিয়ে আদায় করা উত্তম এ নিয়ে আমাদের প্রশ্নের শেষ নেই এবং মন্তব্যেরও কোন শেষ নেই। মাওলানা শফিকুর রহমান নদভী (রঃ) আল ফিকহুল মুয়াস্সার গ্রন্থে ফিতরা কি দিয়ে আদায় করতে হবে সে বিষয়ে কোরআন ও হাদিস মোতাবেক বিস্তারিত বলেন,
সদকাতুল ফিতরের আলোচনায় যে সকল বস্তুর কথা হাদীসে এসেছে সেগুলো মূলত চারটি-
- গম
- যব
- খেজুর
- কিশমিশ
একজনের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করা হবে অর্ধ “ছা” (সারে তিন সের গম বা আটা) পরিমান। গম বা আটা, অথবা ছাতু কিংবা এক “ছা” যব অথবা খেজুর কিংবা কিশমিশ দিয়ে ফিতরা আদায় করা উত্তম।
ফিতরা কাদের দেওয়া যাবে বা ফিতরার ব্যয় খাত
ফিতরা কাদের দেওয়া যাবে কাদের দেওয়া যাবে না এ নিয়ে বর্তমানে আমাদের বিভিন্ন মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। কোরআন হাদিস এবং ফিকাহাবিদদের মতামত অনুযায়ী নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যদি কোন ব্যক্তি উপরে বর্ণিত চারটি দ্রব্য ব্যতীত অন্য শস্য থেকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করতে ইচ্ছা করে তবে সেটি তার জন্য জায়েয আছে । তার এ পরিমাণ শস্য প্রদান করা ওয়াজিব যা অর্ধ বা আধা “ছা” (সারে তিন সের গম বা আটা) গমের মূল্য কিংবা এক “ছা” (সারে তিন সের গম বা আটা) যবের মূল্যের সমমানের বা সমমূল্যের হয় ।
অপরপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন দেশে প্রচলিত মুদ্রায় সদকাতুল ফিতরের মূল্য প্রদান করাও জায়েয আছে। বরং এটি বর্তমান যুগোপযোগী ও উত্তম। কারণ এটিই দরিদ্রের জন্য বেশি উপকারী। এক ব্যক্তির সদকাতুল ফিতর কয়েক ব্যক্তিকে দেওয়া জায়েয আছে। অনুরূপভাবে অনেকের সদকাতুল ফিতর একজনকে দেওয়া জায়েয আছে।
উপসংহার : সদকাতুল ফিতরা কার উপর ওয়াজিব
প্রিয় পাঠক, সদকাতুল ফিতরা কার উপর ওয়াজিব সম্পর্কিত এই পোষ্টটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনি জানতে পেরেছেন সাদকাতুল ফিতর বা ফিতরা প্রদানের বিস্তারিত তথ্য। এখানে বানোয়াট বা মনগড়া কোন কথা বলা হয়নি। কোরআন হাদিস এবং বিশ্বমানের ফিকাহ বিদগণের মতামত অনুযায়ী সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে বর্ণিত সকল তথ্য আল ফিকহুল মোয়াস্সার গ্রন্থের সদাকাতুল ফিতর অংশ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন আর সাদাকাতুল ফিতরা সম্পর্কে যেকোন রকমের প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url